স্টাফ রিপোর্টারঃ
নাটোরে পৃথক মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় বিএনপির কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবির জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালতের বিচারক।
মঙ্গলবার নাটোরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরকসহ পৃথক ৩টি মামলার চার্জ শুনানীর দিন নিধারিত ছিল। এর মধ্যে ২০১২ সালে যুবলীগ কর্মী পলাশ হত্যা মামলায় রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এবং ২০১৭ সালের একটি বিস্ফোরক মামলায় দুলু পত্নী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি চার্জ শুনানীর নিধারিত দিনে আদালতে হাজির না হওয়ায় আইনজীবিরা সময় বৃদ্ধির আবেদন করেন।
কিন্তু আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শরীফ উদ্দীন ওই আবেদন না মঞ্জুর করে তাদের দুজনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিসহ চার্জ গঠন করেন।
এদিকে দুলুর আইনজীবি আবুল হোসেন বলেন, তার মক্কেল রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। তিনি বর্তমানে ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে কেমো চিকিৎসা নিচ্ছেন মর্মে আদালতে চিকিৎসা সনদ এবং স্বামীর সেবারত তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবির সময় আবেদন চেয়ে আদালতে দরখাস্ত দাখিল করা হয়। কিন্ত বিজ্ঞ বিচারক ওই আবেদন না মঞ্জুর করে পৃথক মামলায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
জজ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত পিপি আরিফুর রহমান বলেন, ২০১২ সালের ৮ ডিসেম্বর রাত ১১ টার দিকে যুবলীগ কর্মী পলাশ নাটোর স্টেশন থেকে বাড়ি ফেরার পথে শহরের আলাইপুর এলাকায় দুলুর বাসভবনের সামনে দুলুর উপস্থিতিতে ১৫ /১৬ জন অস্ত্রধারী তার পথরোধ করেঅ এসময় পলাশকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষন করা হলে সে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পলাশ মারা যায়। এঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সৈয়দ মোর্ত্তুজা আলী বালু বাদি হয়ে দুলুসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত ১৫ জনকে আসামী করে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত শেষে পুলিশ ২০২০সালের ২৯ সেপ্টেম্বর দুলু সহ ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট দাখিল করে। অপরদিকে ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর সকাল ১১ টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে দুলুর বাড়ি অতিক্রম করার সময় বিএনপির কর্মী -সমর্থকরা ওই মিছিলের ওপর ককটেল নিক্ষেপ ও গুলি বর্ষন করে।
এ ঘটনায় তৎকালীন সদর উপজেলা সভাপতি রুবেল গুলিবিদ্ধ সহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুম বাদী হয়ে দুলু পত্নী সাবিনা ইয়াছমিন ছবিসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত শেষে পুলিশ ২৫জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখির করেন। পিপি আরিফুর রহমান আরো বলেন, মামলাটি খারিজের পিটিশন দিয়ে সময়াক্ষেপন করা হয়। ফলে কয়েক বছর মামলাগুলো অচলাবস্থায় ছিল।
আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর মামলাগুলো পর্যালোচনা করে এবং বিজ্ঞ আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হই। আদালত আমার কথা শুনেছেন এবং আসামীপক্ষের ২৬৫/সি এর দরখাস্তটি না মঞ্জুর করেন। যেহেতু আসামী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ছিলেন, তাই বিজ্ঞ বিচারক তার পিটিশন ও সময় আবেদন না মঞ্জুর করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েছেন।
পাশাপাশি ৩০২ ধারায় সকল আসামীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠণ হয়েছে। একইসাথে অপর একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিস্ফোরক মামলায় মঙ্গলবার নির্ধারিত চার্জ গঠনের দিনে দুলুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি আদালতে অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন একই আদালতের বিজ্ঞ বিচারক।
জেলা আইনজীবি সমিতির সাধারন সম্পাদক মালেক শেখ বলেন, সন্ত্রাসীদের গড ফাদার, বাংলা ভাইয়ের অন্যতম স্রষ্টা ও জঙ্গিবাদের মদদদাতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বিভিন্ন সময় নাটোরের মানুষে ওপর যে অন্যায় অত্যাচার সহ খুন, জখম, বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগসহ নানা অপরাধের জন্য তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা রয়েছে। তার স্ত্রীও আসামী রয়েছেন।
এর মধ্যে দুটি মামলার বিচারেও সাজা হয়েছে।মামলা দুটি হাইর্কোটে বিচারাধীন রয়েছে। অপর ৯ টি মামলা নাটোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। এই ৯টির মধ্যে আজ মঙ্গলবার ৪টি মামলায় দুলুর হাজিরার দিন ছিল।
দীর্ঘদিন ধরে মাননীয় আদারতে অনুপস্থিত থেকে বিভিন্ন কুটকৌশল অবলম্বন করেএকের পর এক দরখাস্থ দিয়ে সময়ক্ষেপন করে বিচার বিভ্রাট ঘটানোর চেষ্টা করছিল।
সরকারী কৌশলী অদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শুনানীতে সন্তুষ্ট হয়ে বিজ্ঞ বিচারক আসামীদের দরখাস্ত না মঞ্জুর করে দুটি মামলায় চার্জ গঠন করেছে। ১টি মামলায় স্বাক্ষী নিয়েছে এবং বিজ্ঞ বিচারক সময় আবেদন না মঞ্জুর করে আসামী দুলুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিন বলেন, মঙ্গলবার রাজশাহীতে কৃষকদলের সমাবেশে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল নাটোরের প্রিয় নেতা কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর।
কিন্ত ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত নেতা দুলু রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তিনি সমাবেশে াাসতে পারেননি। এদিন নাটোর আদারতেও মামলার হাজিরার দিন ধার্য ছিল। আইনজীবির মাধ্যমে আদালকে অনুপস্থিতির কারন হিসেবে মেডিকেল সার্টিফিকেট দাখিল করে সময় আবেদন জানানো হয়।
কিন্তু সরকারের ফরমায়েসি আদালত মরণ ব্যাধী ক্যান্সার আক্রান্ত একজন চিকিৎসাধীন নেতার জন্যও সময় প্রদান না করে তাকে ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়ে সরকারের ফ্যাসিবাদ রুপের বর্হিপ্রকাশ ঘটানো হয়েছে। আমরা নাটোর জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এই ফরমায়েসি আদেশের তীব্র নিন্দ ও প্রতিবাদ জানায়।