দুর্গাপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়াদহ মেলা

দুর্গাপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়াদহ মেলা

রাজশাহী

মোঃ ইসরাফিল হোসেন,রাজশাহীঃ

প্রতিবছর আশ্বিন মাসের শেষ দিন দুর্গাপুর উপজেলায় শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়াদহ মেলা। কোনো রকম প্রচার ছাড়াই শত শত বছর ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা মেলায় আসেন, দোকানপাট নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন। মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের কয়েকটি গ্রামে চলে উৎসবের আমেজ।

একসময় দীর্ঘদিন চলত মেলাটি। উপজেলা-জেলা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসত। কিন্তু গত কয়েক বছরে মেলার জৌলুশ কমেছে, আর করোনায় সেটা আরও নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছে।

দুর্গাপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে কিসমতগণকৈড় ইউনিয়নের উজালখলসী ও ভবানীপুর গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া আইচান নদীর পাড়ে বসে মেলাটি।

প্রতিবছরের মতো এ বছরও আয়োজিত হয়েছে মেলা। তবে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে গত শনি ও রোববার দুদিন চলে মেলা। মাটির বাহারি হাঁড়ি-পাতিল ছিল মেলার অন্যতম আকর্ষণ। বর্তমানে প্রসাধনী পণ্য ও প্লাস্টিকের খেলনার দোকানপাট সেই স্থান নিয়েছে।

মেলার বয়স ৫০০ না ৬০০ বছর, তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি। স্থানীয় লোকজন জানান, বহু বছর ধরে মেলা বসছে এই গ্রামে। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, জন্মের পর থেকে তাঁরা মেলাটি দেখছেন। তাঁদের বাপ-দাদারাও ছোটবেলা থেকে এই মেলা দেখে বড় হয়েছেন। তাঁদের পূর্বপুরুষেরাও একই কথা বলেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা, প্রবীণ ব্যক্তি আকরাম আলী বলেন, তাঁর দাদাও বলতে পারেননি ঘোড়াদহ মেলাটি ঠিক কবে শুরু হয়েছে। তবে শত শত বছর ধরে এভাবেই আইচান নদী ঘিরে বসছে মেলা।

উজালখলসী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম বলেন, নদীর পাড়ের বিশাল জায়গাজুড়ে মেলা বসত। মেলা উপলক্ষে দুই শর ওপর গরু-মহিষ জবাই করা হতো। আত্মীয়স্বজনে ভরে থাকত বাড়ি। পুরো এলাকায় চলত খাওয়া-দাওয়ার মহোৎসব। কিন্তু বর্তমানে আর আগের মতো উৎসবমুখর নেই মেলার পরিবেশ।

ঘোড়াদহ মেলা কমিটির সভাপতি স্কুলশিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, দুই দিনব্যাপী এ মেলা গত শনিবার শুরু হয়েছে। তবে ফার্নিচারসহ লোপ-তোশকের দোকানপাট মাসব্যাপী থাকবে। তিনি জানান, কমিটির মাধ্যমে মেলাটি পরিচালনা করা হয়। গ্রামের জনসাধারণের সম্মতিতে গঠন করা হয় সেই কমিটি। মেলা থেকে উপার্জিত আয় ব্যয় করা হয় গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কল্যাণে, গ্রামের মানুষের ট্যাক্স পরিশোধে ও অন্যান্য সেবামূলক কাজে।

কিসমতগণকৈড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আফসার আলী মোল্লা বলেন, প্রতিবছরই আশ্বিন মাসের শেষ তারিখে মেলা বসে, কোনো রকম ঘোষণা ও মাইকিং ছাড়াই। আগে মেলা উপলক্ষে আইচান নদীতে নৌকাবাইচ হতো। কয়েক বছর ধরে মেলায় আর কোনো জৌলুশ নেই। কারণ, গান-বাজনা নিষিদ্ধ হওয়ায় মেলার আকর্ষণ নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া করোনার প্রকোপের ফলে মেলায় দর্শনার্থী কমে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *