মো: জাহাঙ্গীর আলম রাজশাহী :
“দুংখ, অভিমান ভুলে হাসি মূখে সজল চোখে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব আজ শুভ বিজয়া দশমী। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হবে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। তাইতো মণ্ডপে মণ্ডপে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া।
হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের ঘরে ঘরে ঢাক- কাঁসরের বাদ্যি-বাজনা,রাত্রি উজ্জ্বল করা আরতি ও পূজারী-ভক্তদের পূজা-অর্চনায় কেবলই মা দুর্গার বিদায়ের আয়োজন। মর্ত্যলোক ছেড়ে বিদায় নেবেন মা দুর্গা। অশ্রু সজল চোখে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভক্তরা বিসর্জন দেবেন প্রতিমা।
রাজশাহী বাগমারা তাহেরপুরের দুর্গাপুরী গোবিন্দ বাড়ি মন্দিরের সভাপতি নিশিত কুমার, সোনা সাহা ও সম্পাদক শ্রী চিরঞ্জীব কুমার রায় বাবু, সবাইকে শারদীয় দূর্গোৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আজ দেবীর দশমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর হবে দর্পণ বিসর্জন।
তিনি আরো বলেন, তাহেরপুরে “রাজা কংস নারায়ণ কর্তৃক দুর্গাপূঁজার সৃষ্টি, তাই এবারের আয়োজনে ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সকলকে উদ্বুদ্ধ করতে ও সংগ্রামী ইতিহাস তরুন প্রজন্মকে জানানো। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব।
আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা, শিউলি ফুলের সুভাস, প্রকৃতির হিমেল হাওয়া ধারণ করেছে এক উৎসবমুখর আমেজ। দশভুজা দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে ধরণিতে আবির্ভূত হন। দেবী দুর্গার আরধনার সময়কে ধরা হয় সকল প্রকার অশুভ-অসত্যকে পরাভূত করে সত্য ও ন্যায়ের বাতাবরণ প্রতিষ্ঠার শুভ সময়। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন সাজে ও আঙ্গিকে দেবী দূর্গার আয়োজন করে থাকেন।
এক একটা মণ্ডপ সাজানো হয় একটা একটা থিমের আঙ্গিকে। তবে অবস্থিত শ্রী শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ দেব বিগ্রহ ঠাকুর মন্দিরের এবারের ব্যতিক্রম আয়োজন সকলের নজর কেড়েছে। আলপনা অঙ্কিত ঐতিহ্যবাহী গ্রাম বাংলার ঘরের মাঝে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ থেকে শুরু করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সৃষ্টি ও বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের পরিচিত হওয়ার অগ্রযাত্রা যেন এক পর্দায় ফুটে উঠেছে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চারটি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠিত। চারটি স্তম্ভ হলো-বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। তাই মন্দিরের প্যাণ্ডেলের চারটি পিলারের নাম দেওয়া হয়েছে চারটি স্তম্ভর নামানুসারে।
যার উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাস লিখিত এক ব্যানার। ব্যানারের শুরুতে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, ৫২ র ভাষা আন্দোলন, ৫৪ র সাধারণ নির্বাচন, ৬৬ এর ছয় দফা, ৬৮ এর আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬৯ এর গনঅঅভ্যুত্থান, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধর ছবির পাশাপাশি সকলের বোঝার সুবিধার জন্য রয়েছে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।
সেট সাথে ব্যানারে ফুটে উঠেছে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা ও জাতীয় চার নেতার কাপুরুষোচিত হত্যাকান্ডও । ২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিতকরণের জন্য দেশব্যাপী যে গনজাগরণ হয়েছিল তাও বর্ণীত রয়েছে একই ফ্রেমে।
২০২১ সালের দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ক্ষত যে এখনও সংখ্যালঘুদের মাঝে রয়েছে তা বোঝানোর জন্য এর প্রতিবাদও স্থান পেয়েছে ফ্রেমে। দেশব্যাপী উন্নয়নের অংশ হিসেবে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রুপপুর পারমানবিক কেন্দ্র স্থান পেয়েছে ফ্রেমের উন্নয়ন অংশে। বাংলাদেশের মেয়েরাও যে আজ পিছিয়ে নেই।
তারাও যে বিশ্বকে জয় করতে পারে তা বোঝানোর জন্য সাফ চাম্পিয়ানে বাংলাদেশের মেয়েদের বিশ্বকাপ জয়ের ছবি যে তা স্মরণ করে দেয়। বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শিক্ষানগরী রাজশাহী যে পিছিয়ে নেই তা বোঝানোর জন্য গ্রিন সিটি ক্লিন সিটি রাজশাহীর বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক ছবি স্থান পেয়েছে ফ্রেমের শেষ অংশে।
আর ফ্রেমের সবার উপরে বড় করে লিখা রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সাল ১৯৭১ যার প্রতিটা অঙ্ক যেন প্রকাশ করে এক তর্জনীর হুংকারে নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সাত জন বীরশ্রেষ্ঠ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের বিনিময়ে একটি স্বাধীনন সার্বভৌম দেশ বাংলাদেশ। গতকাল সোমবার ছিল শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমী। মা দেবী দুর্গাকে বিদায়ের আয়োজনে বিষণ্ণ মন নিয়েই উৎসবে মেতেছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ।