রাজশাহীতে ধষর্ণ ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণ ব্লাকমেইল ও মুক্তিপণ আদায়কারী সহযোগী সহ ৪ আসামী আটক

রাজশাহী

মোঃ ইসরাফিল হোসেনঃ

রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থেকে ধষর্ণকারী ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে ব্লাকমেইল করতঃ মুক্তিপণ আদায়কারী আসামী ও অপরাপর সহযোগী স্ত্রীসহ ০৪ জন আসামীকে আটক এবং ভিকটিমকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।

৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ রাত্রী-০৭.৩০ ঘটিকায় রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানাধীন ভদ্রা মহল্লাস্থ ৩নং রোডের বাসা নং-৫০৪৩ পদ্মা আবাসিক এলাকার জনৈক মোঃ সাব্বির সুলতান (৫০), পিতা-সুলতান আহমেদ এর পাঁচতলা বাড়ীর নিচ তলা (ধৃত ১নং আসামীর ভাড়া বাসা) হতে আসামী

১। মোঃ আলমগীর রয়েল (৪০), পিতা-নরুল ইসলাম, সাং-হেঁতেম খাঁ (সবজিপাড়া পিডিবির পাশের্^), থানা-বোয়ালিয়া, ২। হেলেনা খাতুন (৩০), পিতা-মোঃ নায়েব আলী, স্বামী-মোঃ আলমগীর রয়েল, ৩। দিলারা বেগম (৩৫), পিতা-মোঃ নায়েব আলী, স্বামী-আলমগীর, উভয় সাং-নামা ভদ্রা,

৪। মোছাঃ মমতাজ বেগম (৪২), পিতা-মৃত মনু হোসেন, স্বামী-মোঃ আফজাল হোসেন, সাং-উপড় ভদ্রা, সর্ব থানা-চন্দ্রিমা, রাজশাহী মহানগরগনদের গ্রেফতার করে ও ভিকটিমকে উদ্ধার করে। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত স্থান ও ১নং আসামীর নিকট হতে (১) ১০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প-০৩টি, মোবাইল ফোন-০৫টি, সীম-০৪টি, বিভিন্ন চেক বই-০৩টি, ২নং আসামী হেলেনা খাতুন এর নিজ নামীয় পাসপোর্ট-০২টি উদ্ধার করে।

গত ০৭/০২/২০২৪ তারিখ আনুমানিক দুপুর-১২.৩০ ঘটিকায় ভিকটিম বাড়ী থেকে কেনাকাটার উদ্দেশ্যে রাজশাহী কোর্টস্টেশন এলাকায় আসে। কেনাকাটার একপর্যায়ে ভিকটিম দেখতে পায় তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনটি হারিয়ে গেছে।

ভিকটিম মোবাইল ফোনটি খোঁজা-খুঁজি করার সময় উল্লিখিত ভিকটিমের পূর্ব পরিচিত ধৃত ১নং আসামী তাকে জিজ্ঞাসা করে যে, তার কি কোন কিছু হারিয়ে গেছে? ভিকটিম প্রতিউত্তরে বলে যে, তার মোবাইল ফোনটি খুঁজে পাচ্ছে না। তখন উক্ত ধৃত ১নং আসামী উক্ত তারিখ বেলা অনুমান ০২.০০ ঘটিকার সময় তার মোবাইল ফোনটি পাইয়ে দিবে বলে অজানা একটি অটোতে উঠাইয়া রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানাধীন ভদ্রা এলাকায় নিয়ে যায় এবং সেখানে পূর্ব হতে অপেক্ষামান ধৃত ২, ৩, ৪নং আসামীদেরকে উপস্থিত দেখতে পায়।

পরে ধৃত ১নং আসামী অপরাপর ধৃত ২,৩,৪নং আসামীদের সহযোগিতায় মোবাইল পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ফুসলাইয়া, ভুলবুঝিয়ে ও বিভিন্ন ধরণের প্রলোভন দিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঘটনাস্থল রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানাধীন ভদ্রা মহল্লাস্থ ৩নং রোডের বাসা নং-৫০৪৩ পদ্মা আবাসিক এলাকার জনৈক মোঃ সাব্বির সুলতান (৫০), পিতা-সুলতান আহমেদ এর পাঁচতলা বাড়ীর নিচ তলা (ধৃত ১নং আসামীর ভাড়া বাসা) ধৃত ১নং আসামীর বসতবাড়ীর ভিতর পশ্চিম দূয়ারী ঘরে নিয়ে গিয়ে ধৃত ১নং আসামী অপরাপর সকল আসামীর সহযোগিতায় ভিকটিমকে উক্ত বাড়ীর ভিতর জোরপূর্বক আটক করে এবং একপর্যায়ে ধৃত ১নং আসামী আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয় এবং একপর্যায়ে ১নং আসামীর শয়ন কক্ষে ধর্ষণ করে।

উক্ত ধৃত ১নং আসামী ভিকটিমকে ধর্ষণকালে অপরাপর ধৃত ২নং আসামী হেলেনা খাতুন (৩০), ৩নং আসামী দিলারা বেগম (৩৫) ও ৪নং আসামী মোছাঃ মমতাজ বেগম (৪২)‘দের সহযোগিতায় গোপনে ভিডিও ধারণ করে এবং ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ শেষে ভিকটিমকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক ধৃত ১নং আসামী ও অপরাপর সহযোগী আসামীদের সহযোগিতায় ০৩টি ১০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ০৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে এবং উক্ত রুমে জোরপূর্বক আটক করে রাখে।

পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে উপরোক্ত ঘটনাস্থলে র‌্যাবের টিম অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিমকে উদ্ধার করে এবং উপরোক্ত আসামীদেরকে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জানা যায় যে, ধৃত ১নং আসামী উক্ত ভিকটিমের মোবাইল ফোন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বর্ণিত ঘটনাস্থলে নিয়ে এসে অপরাপর আসামীদের সহযোগিতায় অপহরণ করে ফুসলিয়ে, ভুলবুঝিয়ে, প্রলোভন দিয়ে ভিকটিমের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং ভিডিও ধারণ করে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার আশায় মুক্তিপণ বাবদ ৫ লক্ষ টাকা দাবী করে।

আরো জানা যায় যে, ধৃত ১নং আসামী মোঃ আলমগীর @ রয়েল একজন প্রতারক ও ব্লাকমেইলকারী। সে এবং তার স্ত্রী (২নং আসামী) ও শালিকাদ্বয় (৩ ও ৪নং আসামী) পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন মহিলাদের ও পুরুষদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ফুসলিয়ে, ভুল বুঝিয়ে উল্লিখিত ভাড়া বাড়ীতে সংগোপনে নিয়ে এসে জোরপূর্বক অনৈতিক কার্যকলাপ করতঃ গোপনে ভিডিও ধারণ শেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবী করে তাদের নিকট হতে বিভিন্ন মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করে আসছে।

ধৃত আসামীর নামে ইতিপূর্বে নারী ও শিশু আইনে ০১ টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *