চাঁপাইনবাবগগঞ্জে নিমগাছে মিষ্টি রস, রোগ মুক্তির আশায় রস সংগ্রহের হিড়িক!

চাঁপাইনবাবগগঞ্জে নিমগাছে মিষ্টি রস, রোগ মুক্তির আশায় রস সংগ্রহের হিড়িক!

রাজশাহী

মোঃ ইসরাফিল হোসেন,রাজশাহী:

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গড়াইপাড়া গ্রামের একটি বাড়ির উঠোনের নিমগাছ থেকে মিলছে মিষ্টি রস। খেজুর রসের মতোই স্বাদ। তা সংগ্রহ করতেই গাছটির তলায় ভিড় করছেন কৌতুহলী মানুষ। গাছটিতে কেউ ঝুলিয়ে রেখেছেন প্লাস্টিকের বৈয়ম আবার কেউ পানির বোতল।

পাত্রগুলো মিষ্টি রসে ভরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই; বাকি অন্যরাও গাছে পাত্র ঝুলানোর জন্য লাইন ধরে আছেন। নিমগাছ থেকে বের হওয়া মিষ্টি রস হাতে নিয়ে চেটেপুটে খাচ্ছেন সববয়সী মানুষ। আর বলছেন, ‘আজব তো! তিতা গাছে মিষ্টি রস।’

ভিডিও : চাঁপাইনবাবগগঞ্জে নিমগাছে মিষ্টি রস, রোগ মুক্তির আশায় রস সংগ্রহের হিড়িক!

নিম গাছের মিষ্টি রস এমন চিত্রের দেখা মেলেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গড়াইপাড়া গ্রামের নাসির আলীর বাড়ির উঠোনে। তার বাবার নাম মৃত মো. কালু। প্রায় দুইদশক আগে গাছটি উঠোনে লাগানো হয়। এখনই সেই গাছ থেকে মিলছে খেজুরের স্বাদের মতোই মিষ্টি রস। অনেকেই রোগবালাই মুক্তির আশায় এই রস সংগ্রহে ভীড় করছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২সপ্তাহ ধরেই এই নিমগাছ থেকে মিষ্টি রস বের হচ্ছে। প্রথমের দিকে কম করে রস বের হলেও এখন পরিমাণটা অনেক বেড়েছে। এই চাঞ্চল্যকর কথা আশপাশের গ্রামগুলোয় ছড়িয়েছে। তারপর থেকেই ভিড় জমেছে গড়াইপাড়ার এই বাড়ির উঠোনে। এছাড়া উৎসুক জনতা এ গাছের ডাল-পাতা ও ফল সংগ্রহ করছেন। এতো কিছু শুধুমাত্র রোগমুক্তির বালাইয়ের জন্যই।

ষাটোর্ধ মোবারক আলী বলেন, ৬৫ বছরের জীবনে কখনো এমন অদ্ভুত এমন ঘটনা দেখিনি। নিমগাছের সবকিছুই তিতা বলে আমরা জানি। কিন্তু এই গাছ থেকে মিষ্টি রস বের হচ্ছে। আমিও খেয়েছি, এর স্বাদ খেজুরের মতোই।

চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রায় দুসপ্তাহ থেকেই হঠাৎ করেই নিমগাছটি দিয়েই ফেনাসহ মিষ্টি রস বের হচ্ছে। অনেকই এ খবর শুনে রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে এ গাছের রস নিয়ে যাচ্ছে। অনেক মানুষ বিশ্বাস করেছে এটি সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন গাছ।
কলেজছাত্র ওসমান আলী বলেন, নিমগাছটি থেকে বের হওয়া রসের গন্ধও খেজুরের রসের মতো। এ রস খেলে রোগবালাই মুক্তি পাওয়া যাবে বলে অনেকই সংগ্রহ করেছেন।

আরেক গ্রামের বাসিন্দা আকতারা বেগম গড়াইপাড়ায় এসেছেন শুধুমাত্র নিমগাছের রস নেয়ার জন্যই। তার শরীরে বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে রস সংগ্রহ করতে এসেছেন। তিনি বলেন, ডায়াবেটিসসহ দীর্ঘদিন ধরে মাজা ও পা ব্যথার সমস্যায় ভূগছি। লোকমুখে শুনিছে নিমগাছ দিয়ে মিষ্টি রস বের হচ্ছে। এই রস খেলে বিভিন্ন রোগবালাই ভালো হচ্ছে।

নিমগাছটির মালিক নাসির আলী বলেন, বাড়ির উঠোনোর এ গাছটি স্থানীয় একটি মসজিদে দান করা হয়েছে। এবারই প্রথম নয়, এর আগেও এমন মিষ্টি রস বের হয়েছিল। তবে এমন কাণ্ড ঘটেছে প্রথমবার। এই রস সংগ্রহ করতে হিড়িক পড়েছে নিমগাছের তলায়।

মাটির গুণাগুণ-আশেপাশের বিভিন্ন পরিবেশের প্রবাভে নিমগাছের রসের স্বাদে পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করেন উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষকরা।

এবিষয়ে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক একেএম শফিকুর রহমান বলেন, এমন ঘটনা খুব কম দেখা গেলেও একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। মাটির নিচের গুণাগুণসহ বিভিন্ন
পারিপার্শ্বিক কারনে এমনটি হতে পারে। তবে এটি হয়ত কয়েকদিনের মধ্যেই আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে। তিতাগাছের এই মিষ্টি রস পান করে বিশেষ গুণ-উপকারিতা নেই বলেও জানান তিনি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড মঞ্জুর হোসেন বলেন, খেজুরের গাছের মতো পাতা এক ধরের অনুজীব থাকে। এই অনুজীব থেকে এরকম সৃষ্টি হয়। অনুজীবটি ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস জাতীয়। গাছের বিভিন্ন স্থানে পৌছালে মিষ্টি জাতীয় রস বের হয়। এরকম বেশ কয়েক যায়গায় দেখেছি। অস্বাভাবিক কিছু না। আবার এগুলো পান করলে ক্ষতিও হবে না। তবে না পান করাই ভালো। এতে কোনো উপকারিতাও নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *