বাগমারায় বিশ বছর চাকরির পর আয়া পদ শূন্য দেখিয়ে সভাপতির পুত্রবধূকে নিয়োগ

রাজশাহী

বাগমরা প্রতিনিধি:

রাজশাহীর বাগমরায় তকিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে বিশ বছর চাকরির পর আয়া পদ শূন্য দেখিয়ে সভাপতির পুত্রবধূকে নিয়োগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের তকিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, তকিপুর গ্রামের সাইদুর রহমানের স্ত্রী রাহেমা বিবি বিগত ২৫ নভেম্বর ২০০৪ সালে বিধি মোতাবেক আয়া (এমএলএসএস) পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। বেতন এবং চাকরি স্থায়ী করণের জন্য তিন লক্ষ টাকা এবং স্বামীর নামীয় ৯শতাংশ জমি স্কুলের নামে দান করেন।

অদ্যাবধি বিনা বেতনে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ৯ম-১০ম শ্রেণি পর্যন্ত এমপিও করণ না হওয়ায় বেতন পাচ্ছিলেন না আয়া রাহেমা বিবি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে মাধ্যমিক শাখা পর্যন্ত এমপিও করণ হয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন এমন কপি সংবাদকর্মীদের সরবরাহ করেছেন।

সূত্র জানায়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দীন এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল আজিজ যোগসাজশে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পূর্ববর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেন।

অন্যদিকে রাহেমা বিবির ছেলে সোহেল রানাকে পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ প্রদান করা হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হলেও সোহেল রানাকে নিয়োগের বিপরীতে নিয়োগপত্র প্রদান করা হয়নি। সেটিও বাতিল করে পুনঃরায় নিয়োগ প্রক্রিয়া সমাপ্ত করা হয়েছে।

বেতনের কাগজপত্র সেন্ট হলে নিয়োগপত্র দেয়া হবে বলে প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দীন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সোহেল রানা জানান, ১৯ মার্চ ২০২৪ ইং পর্যন্ত তিনি হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন। তারপর থেকে নতুন হাজিরা খাতা বানিয়ে তাকে স্বাক্ষর করতে দেননি প্রধান শিক্ষক। চাকরি, টাকা পয়সা, জমিজিরাত হারিয়ে রাহেমার পরিবার মানসিক দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন।

জমি সহ টাকা ফেরৎ চাইলে প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতির লোকজন নানা ভাবে হুমকি ধামকি অব্যাহত রেখেছেন। তকিপুর নিবাসী হবিবর রহমান মিরের ছেলে আঃ হালিম বলেন, নিরাপত্তা কর্মী পদে নিয়োগ দিবেন বলে গিয়াস স্যার ১৫ লক্ষ টাকা নিয়েছেন।

আমার চাকরি এবং টাকা ও ফেরৎ দেননি। স্থানীয় সূত্রের দাবী, বেশ কিছু লোকবল নিয়ে মহড়া সহকারে সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষক নতুন নিয়োগ প্রাপ্তদের যোগদান করিয়েছেন। শিক্ষক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম জানান, রাহেমা দীর্ঘ দিন থেকে চাকরি করে আসছেন। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনায় নতুন নিয়োগের রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেছেন।

ম্যানেজিং কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, প্রধান শিক্ষক আমাকে কমিটিতে রেখেছেন। আমি অল্প শিক্ষিত মানুষ, মিটিং এর কথা বলে আমার কাছে স্বাক্ষর নিয়েছেন। ১৫ মাসে একটি মিটিংও হয়নি। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। ম্যানেজিং কমিটির অপর সদস্য আবু সাঈদ বলেন, প্রথম মিটিং এর কথা বলে আমার কাছে স্বাক্ষর নিয়েছে, এর বেশী কিছু জানি না।

যদি নিয়োগ হয়ে থাকে, সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষক কাজটি অন্যায় করেছেন। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবদুল আজিজ জানান, রাহেমার বয়স শেষ। তাই নিয়োগ দেয়া যায়নি। পুত্রবধূকে নিয়োগের কথা স্বীকার করেন। কত টাকায় নিয়োগ হয়েছে জানতে চাইলে ৩ লক্ষ টাকার কথা উল্লেখ করেন।

(অডিও ক্লিপ আছে) প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দীন জানান, রাহেমাকে পূর্ববর্তী প্রধান শিক্ষক নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগ দিয়েছেন। পূর্বে ২০০৪ সালে আয়া পদ ছিল না। অনেক চেষ্টা করেও তাঁর বেতন করা সম্ভব হয়নি। নতুন জনবল কাঠামো অনুযায়ী সমপদে তাঁকে পদায়ন করা যেত কী না এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তা হয়তো করা যেত, তিনি অনেক দিন অনুপস্থিত ছিলেন।

রাহেমার ছেলে সোহেল রানাকে নিয়োগের বিষয় অস্বীকার করেন। বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *