দাবদাহ থেকে বাঁচতে গোসলে নেমে ১০ দিনে প্রাণ গেলো ৯ শিশু-কিশোরের

রাজশাহী

স্টাফ রিপোর্টারঃ

রাজশাহীতে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এপ্রিলের শুরু থেকেই এ বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। দাবদাহ থেকে বাঁচতে অনেকেই নামছেন নদী বা পুকুরে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা। আর তাতেই ঘটছে দুর্ঘটনা।

গত ১০ দিনে রাজশাহীতে ৯ শিশু-কিশোর পানিতে ডুবে মারা গেছে। এদের মধ্যে একজন তরুণও রয়েছেন। সবশেষ মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) তিন কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

ফায়ার সর্ভিস ও নৌপুলিশের তথ্যমতে, ১৪ এপ্রিল রাজশাহীর বাঘায় বিয়েবাড়িতে এসে পানিতে ডুবে মারা যায় জান্নাত খাতুন (৮) ও ঝিলিক খাতুন (১২) নামের দুই শিশু। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) পদ্মায় গোসল করতে নেমে আরও এক শিশু মারা যায়। শনিবার (২০ এপ্রিল) বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীতে নৌকায় করে গোসল করতে গিয়ে মারা যান আসাদ হোসেন (১৮) নামের এক তরুণ।

রোববার (২১ এপ্রিল) পবায় পদ্মা নদীতে গোসল করতে নামেন বাপ্পি হোসেন (১৬) ও মনির হোসেন (২০)। পরে ডুবে মারা যান তারাও। সবশেষ মঙ্গলবার রাজশাহী কাটাখালী এলাকায় পানিতে ডুবে তিন কিশোরের মৃত্যু হয়। তারা হলো কাটাখালী বাখরাবাজ এলাকার রেন্টুর ছেলে যুবরাজ (১২), লিটনের ছেলে আরিফ (১৩) ও নুর ইসলামের ছেলে জামাল (১২)।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সবশেষ গত ১৪ এপ্রিল মাত্র দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে। এর আগে ৩০ মার্চ রাতে জেলায় মাত্র ১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। অথচ সোমবার (২২ এপ্রিল) জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের দুদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা আবু সামা বলেন, রাজশাহীতে গত কয়েকদিন ধরেই পানিতে ডুবে মৃত্যু বেড়েছে। বিশেষ করে নদীতে ডুবে। আমার ধারণা করছি, গরম থেকে পরিত্রাণ পেতে কিশোররা নদীতে গোসল করতে গিয়ে মারা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যারা মারা যাচ্ছেন তাদেন অনেকেই সাঁতার জানতেন না। আবার অনেকেই সাঁতার জানতেন। কিন্তু একজন ডুবে যাচ্ছে দেখে আরেকজন ধরতে গিয়ে দুজনই ডুবে মারা যাচ্ছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।

গরম বেড়েছে। এসময় শিশু-কিশোর যারা সাঁতার জানে না তারা যাতে নদীতে গোসলে না যায়, সেদিকে নজর দিতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এটি করা গেলে মৃত্যু অনেকটাই কমে আসবে।

রাজশাহী মহানগর নৌপুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, নদীতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনায় আমার খুবই মর্মহত। আমরা এসব ঘটনা কমাতে এরই মধ্যে উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা ক্যাম্পেইন করবো।

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতিটি ঘাটে ঘাটে গিয়ে নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিচ্ছি। এর পাশাপাশি ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হবে। পাশাপাশি শিশু-কিশোর বা যারা সাঁতার জানে না, তারা যাতে নদীনে না নামে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *