স্টাফ রিপোর্টার:
এক সময়ের ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হারুন-অর রশিদ। তিনি নাটোরের সিংড়া সদরে অবস্থিত সেবা মেডিকেল কমপ্লেক্স নামের একটি বেসরকারি মেডিকেলের ক্রয় সুত্রে মালিক। গত ১৭ বছর যাবৎ তিনি এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন।
বেশ কয়েক বছর যাবৎ ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানান সময় বিভিন্ন অভিযোগের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে জাতীয় দৈনিক সহ অনলাইন গণমাধ্যমে সেবা মেডিকেল কমপ্লেক্সের পরিচালক হারুনের নানা কুকীর্তি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। নামটা খুব সুন্দর হলেও সেখানে মিলছেনা সেবা, হয়রানি ও প্রতারণার দৃষ্টান্ত এখন সেবা মেডিকেল।
সেবা দেওয়ার নামে চলছে অপচিকিৎসা। প্রতিনিয়ত তার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ প্রতিনিয়ত পড়ছে হারুনের পোষা দালালের খপ্পরে। ভুল বুঝিয়ে সেবা মেডিকেলে নিয়ে চিকিৎসা দেয়ার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।
শুধু চমকপ্রদ নামেই সেবা মেডিকেল কমপ্লেক্স। এর অন্তরালে লুকিয়ে আছে রোগীদের ভোগান্তি আর অনৈতিক কর্মকান্ড। সেবা মেডিকেলে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত, বঞ্চিত ও প্রতারিত হচ্ছে অসংখ্য অসহায় মানুষ। এদিকে চিকিৎসা শাস্ত্রের সনদ না থাকলেও প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হারুন বনে গেছেন ডাক্তার।
বর্তমানে তিনি ডাক্তার হারুন নামে পরিচিত। নিজেই রোগীদের সার্জারি পর্যন্ত করেন এমন নজির ইতিহাস রয়েছে অনেক। অনেকে তার অপারেশনের পরে মৃত্যুবরণও করেছেন। কেউ কেউ আবার অঢেল টাকা খরচের পরে জীবিত রয়েছেন কোনোমতে।
সম্প্রতি সেবা মেডিকেল কমপ্লেক্সে এমন একটি লোমহর্ষ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা সুত্রে জানা যায়, গত ৫ মে রবিবার উপজেলার বড় চৌগ্রামের (ফিডের দোকানদার) সেলিমের পরামর্শে ছাতারদিঘী ইউনিয়নের উদিশা গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে জাহিদ হাসানের স্ত্রী তাসলিমা খাতুন (২০) কে সিজার অপারেশনের জন্য সিংড়া সেবা মেডিকেল কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
হারুন অর রশিদ সেলিমের বন্ধু সেখানে গেলে ভালো চিকিৎসা হবে বলে ভুলিয়ে ভালিয়ে তাদের পাঠায় এ দালাল।
পরে ওই দিন দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে তাসলিমা কে সিংড়া সেবা মেডিকেল কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে অপারেশন সম্পন্ন করা হয়। অপারেশনে তাসলিমার একটি মেয়ে সন্তান হয়। পরে গত ৮/০৫/২৪ ইং তারিখে তাকে মেডিকেল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়। ১০ দিনের মাথায় সেলাই কাটার পরের দিন থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে থাকে। রক্তের সাথে সাদা রঙ্গের সুতার মতো সেলাই করা গজ দেখা যায়।
অপারেশন সম্পর্কে ডাক্তারের শারীরিক গঠনের বর্ণনা দিয়ে রোগী তাসলিমা বলেন, ফর্সা করে লম্বা মাথায় চুল নেই চান্দু করে লোক তার নাম হারুন। তিনি নিজেই আমার সিজার অপারেশন করেছে। আমি এর সুবিচার চাই।
ভুক্তভোগী তাসলিমার স্বামী জাহিদ হাসান বলেন, গত ২ মাস আগে সেবা মেডিকেল কমপ্লেক্সে আমার স্ত্রী তাসলিমার সিজার অপারেশন করা হয়। অপারেশন বাবদ আমার কাছ থেকে সাড়ে ১৫ হাজার টাকা নেয়। অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ মহিলা ডাক্তার দ্বারা অপারেশনের কথা বলে হারুন নিজেই অপারেশন করেছে।
সে ডাক্তার না হয়েও সিজার করে আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। তাকে এসব কথা বলে ক্ষতি পূরণ চাইতে গেলে হারুন বলেন, এসব নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করলে তোদের সমস্যা আছে বলে হুমকি ধামকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। গত ৫ মে থেকে এখন পর্যন্ত তাসলিমার শরীরে ২০ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আমার স্ত্রীর জীবন সংকটাপন্ন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমি হারুনের প্রতারনার বিচার এবং ক্ষতি পুরন চাই।
তাসলিমার বাবা বলেন, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার শারমিন সুলতানা কে দিয়ে অপারেশন কথা বলে হারুন নিজেই অপারেশন করেছেন। আমরা গরিব অসহায় মানুষ ইনফেকশন হয়ে আমার মেয়ে তাসলিমা ২ মাস যাবৎ ভুগছেন। আমি এর বিচার চাই
এ বিষয়ে মুঠোফোনে সেবা মেডিকেল কমপ্লেক্স এর পরিচালক হারুন অর রশিদ অপারেশনের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, আমি ডাক্তার না অপারেশন করবো কি ভাবে। অপারেশন করেছেন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসুতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার মোছাঃ শারমিন সুলতানা।
তারা আমার কাছে ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতি পূরণ চেয়েছে। আমি রাজি না হয়ে আমার সেবা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে বলেছি।
সরেজমিনে রামেক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাসলিমার অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল বলে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ডাক্তার শারমিন সুলতানা সেবা মেডিকেল কমপ্লেক্সে রোগী দেখেন প্রতি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। অথচ তিনি রবিবার দুপুরে ওই মেডিকেলে কিভাবেই বা করলেন সিজার অপারেশন এমন প্রশ্ন জনমনে?