মোঃ ইসরাফিল হোসেন :
ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করলেন ভবানীগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ হাতেম আলী।
১১ দফা দাবি নিয়ে বুধবার সকাল থেকে কলেজ চতুরে মানববন্ধন করেন ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ। শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে ছিল মূলত অধ্যক্ষ হাতেম আলীর সময়ে ঘটে যাওয়া নানা অনিয়মের কথা। সেই দাবির গুলোর ভিত্তিতে সর্বশেষ একদফায় পরিনত হয়। সেটা হলো অধ্যক্ষ হাতেম আলীর পদত্যাগ।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কলেজের প্রধান ফটকে তালা দেয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যেন কোন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করতে না পারে। অন্যদিকে অধ্যক্ষ হাতেম আলী পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
খবর পেয়ে দ্রুত ভবানীগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অত্র প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
এ সময় অধ্যক্ষ হাতেম আলীর পদত্যাগের দাবীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে বৈঠক করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ প্রশাসনের নেতৃবৃন্দ। সকাল থেকে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন কর্মসূচী চলে পদত্যাগের আগ পর্যন্ত।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিকাল ৩টার পরপর পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করেন অধ্যক্ষ হাতেম আলী। ২০১৩ সালে হাতেম আলী ভবানীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর সময়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালে কলেজটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মর্যাদা পায় কলেজটি।
অধ্যক্ষ হাতেম আলীর তত্ত্বাবধানে বেশ কয়েকবার সেরা কলেজের মর্যাদা পায়। সেই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ক্রমের ভারি হতে থাকে অভিযোগের পাল্লা। নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।
সেই সাথে দুর্নীতি দমন কমিশনে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়। নানা পর্যায়ের যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে দুর্নীতির হাত থেকে রক্ষা পায়। সেগুলে ছাড়াও অধ্যক্ষ হাতেম আলীর বিরুদ্ধে আরো অনিয়মের অভিযোগ তুলা হয়। সর্বশেষ শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়।
দেশ থেকে দুর্নীতির আর বৈষম্য দূর করা লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এই সরকার। সেই সাথে যেহেতু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরকার পতন হওয়ায় পর থেকে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ পদত্যাগ করছেন। কেউ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে না চাইলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।
সেই ধারাবাহিকতায় ভবানীগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ হাতেম আলীর পদত্যাগ দাবী করে আন্দোলন শুরু করে ছাত্র-ছাত্রীরা। ছাত্রদের সেই আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করে প্রতিষ্ঠান ছাড়েন অধ্যক্ষ হাতেম আলী।
এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সেই পদত্যাগ পত্র নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট জমা দেন। তিনি যেন অধ্যক্ষ হাতেম আলীর পদত্যাগের বিষয়ে কার্যকর করতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করে সে ব্যাপারে অনুরোধ করে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন অধ্যক্ষ হাতেম আলী। কলেজের সাথে তার যে স্মৃতি সেটা তুলে ধরেন। সেই সাথে কিভাবে কলেজটিকে সরকারি করেছেন সে কথা বলেন। ভবানীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রুপান্তর করতে তার যে ত্যাগ সেটি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। কারো ভুলে যেন স্বনামধন্য কলেজটি নষ্ট হয়ে না যায় সে ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা যেন নজর রাখে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা ভবানীগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ হাতেম আলীর পদত্যাগ পত্রটি আমার নিকট জমা দিয়েছে
এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া আমার জন্য নিয়ম বহির্ভূত এব্যপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।