পুঠিয়ার ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলো ঘুষের স্বর্গ রাজ্য, টাকা ছাড়া মেলেনা কোনো সেবা!

রাজশাহী

স্টাফ রিপোর্টার:

রাজশাহীর পুঠিয়ার ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলো যেনো ঘুষের স্বর্গ রাজ্য, টাকা ছাড়া কোনোভাবেই মেলে না ভুমি সেবা। জমির খাজনা দিতেও, দিতে হয় অতিরিক্ত টাকা। অন্যান্য ভুমি সেবা দিতেও দর-দাম করে নেওয়া হয় ঘুষের টাকা। ঘুষের টাকা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার মনমতো না হলে ঘুরতে হয় দিনের পর দিন, মাসের পর মাস।

গত প্রায় ৩ মাস যাবৎ একটি অনুসন্ধানী দল অনুসন্ধান চালিয়ে উপজেলার মঙ্গলপাড়া, মোল্লাপাড়া এবং ধোপাপাড়া এলাকার পাইকপাড়া ভূমি অফিসের এমন তথ্য তুলে এনেছেন।

উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অবস্থা খুব বেশি করুন। ওই অফিসের আওতায় সকল কৃষকরা এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছেন নায়েব কামরুজ্জামানের নিকট। পাইকপাড়া ভূমি অফিসের নায়েব কামরুজ্জামানের খোলামেলা ঘুষ গ্রহণের এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি গুঞ্জন উঠেছে একই জমির দুজনকে মালিক দেখিয়ে খাজনা গ্রহণ করার মত ঘটনা।

উপজেলার এলাকার দুলাল নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার কাছে খাজনা বাবদ ২৯০০ টাকা দাবি করে। দুইদিন পরে ৬০ টাকার খাজনা চেক দিয়ে ৫০০ টাকা নেয়।

ঝলমালিয়া এলাকার কলিমুদ্দিন মোল্লা তার দুইটি চেকে ৩৩০ টাকা খাজনার রসিদ দেয় অথচ নেয় ১০০০ হাজার টাকা, আরো ১০০০ টাকা দাবি করে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মোট ৩টি চেক নিতে যাই। আমার কাছে ১০০০ টাকা ছিল। ২০০০ টাকা না থাকায় ১টি চেক আটকে দেওয়া হয়েছে। আরো ১০০০ টাকা দিলে ওই চেক দিবে।

উপজেলার হাতিনাদা এলাকার রহেদ মোল্লা তার নিকট থেকে ৩০ টাকার চেকের রসিদ দিয়ে ২০০ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, জোর করে আমাকে ৩০ টাকার রসিদ দিয়ে ২০০ টাকা নিয়েছে।

এ বিষয়ে বড় সেনবাগ এলাকার আব্দুল হাই পিতা আব্দুর রহমান এর কাছ থেকে নেয়া হয়েছে মোটা অংকের টাকা।

এমনকি পাইকপাড়া ভূমি অফিসের নায়েব কামরুজ্জামানের হাত থেকে রক্ষা পায়নি গুচ্ছগ্রামে বসবাস করা অতি দরিদ্র ভিক্ষুকরাও। তাদের নিকট থেকেও নেয়া হয়েছে  ১০০ টাকা আবার কারো নিকট থেকে ১২০ টাকা করে। অথচ উপজেলা ভূমি অফিস থেকে জানা যায় মাত্র ১০ থেকে ২০ টাকা খাজনা নেয়ার কথা রয়েছে।

পাইকপাড়া অফিসে কর্মরত নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক তিনি বলেন, এই কামারুজ্জামানের কারণে সত্যিই এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে আমরা তার ভয়ে কোন প্রতিবাদ করতে পারিনা। দেখেন আপনারা যদি কিছু করতে পারেন তাহলে অফিসটির খুবই ভালো হতো।

এ বিষয়ে সাবেক জিউপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান তিনি বলেন, একজন এসে আমাকে জিজ্ঞেস করছে দেখুন তো চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে কয় টাকার চেক দেওয়া হয়েছে সেখানে আমি দেখি ৩০ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। পরে তিনি বলেন আমার কাছ থেকে ২০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। এমনিভাবে ওই অফিসে বেশ কয়েকজন আসলে তখন আমি দেখি সবার কাছ থেকে চেকের রশিদ দেওয়া আছে একরকম এবং তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা নেওয়া হয়েছে। কখনো কখনো বড় মোটা অংকের টাকা চুক্তি করে চেক দেওয়া হয় অফিস থেকে। এটা নতুন কিছু নয়।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে পাইকপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব কামরুজ্জামান অনুসন্ধানী টিম অগ্রযাত্রাকে বলেন, আমার ভুল হয়েছে এই অফিসে আর কোনদিন কারো কাছ থেকে টাকা পয়সা ঘুষ গ্রহণ করবো না এমনকি যা খাজনা জা তাই নেব, আর কোনদিন কাউকে হয়রানি করবো না আপনারা আমাকে মাফ করে দেন। আর এই টাকাগুলো আপনাদের চা মিষ্টি খাওয়ার জন্য দিচ্ছি। এমনকি সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করারও চেষ্টা চালান নায়েব কামরুজ্জামান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঠিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ বসাক তিনি বলেন, এসব বিষয়গুলো আমার জানা ছিল না। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। তদন্ত করে সঠিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *