বগুড়া’র দুপচাঁচিয়ায় অজ্ঞাত লাশের রহস্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উন্মোচন ও ঘটনায় জড়িত প্রধান সন্দেহভাজনসহ গ্রেফতার-০৩

রাজশাহী

মোঃ ইসরাফিল হোসেন রাজশাহী:

২৮ এপ্রিল (শুক্রবার) সকালে দুপচাঁচিয়া থানাধীন চেঙ্গা সাকিনে মোঃ লবির উদ্দিন এর পানির পাম্পের পার্শ্বে জনৈক মোঃ হারুন অর রশিদ, পিতা-মৃত ইসমাইল হোসেন, সাং-চেঙ্গা ছাতিয়াগাড়ী, থানা-দুপচাঁচিয়া, জেলা-বগুড়া এর ধান ক্ষেতের মধ্যে থেকে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত লাশের রহস্য উদঘাটন করেছে দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ। ঘটনা তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে মাষ্টার মাইন্ডসহ ০৩ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন ১। আদমদীঘি থানাধীন মুড়ইল তালুকদারপাড়া গ্রামের মোঃ আঃ রাজ্জাক এর পুত্র মোঃ মাহবুব আলম (৩০), ২। দুপচাঁচিয়া থানাধীন চেঙ্গা গ্রামের মোঃ গোলাম মোস্তফা এর পুত্র মোঃ মোক্তার (২১) এবং ৩। চেঙ্গা ছাতিয়াগাড়ী গ্রামের মৃত হাসত আলী ওরফে হাসো এর পুত্র মোঃ তারেক, খানা-দুপচাঁচিয়া, সকলের জেলা-বগুড়া। ২৮ এপ্রিল সকালে দুপচাঁচিয়া থানার একটি চৌকস টিম পুলিশ সুপার জনাব সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম, পিপিএম মহোদয়ের সার্বিক দিক নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে দুপচাঁচিয়া থানা এলাকায় পৃথক ২টি অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিগণ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে বলে দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ সুত্রে জানা যায়।

সংবাদদাতা মোছাঃ তারা বানু জানান যে, তার ছেলে মৃত আব্দুল মালেক (১৫), পিতা-মৃত হাসমত আলী ওরফে হাসো, সাং-চেঙ্গা ছাতিয়াগাড়ী, থানা-দুপচাঁচিয়া, জেলা-বগুড়া একজন মুরগী দোকানের কর্মচারী। মৃত আব্দুল মালেক (১৫) বাড়ি থেকে প্রতিদিন সকাল অনুমান ০৬:০০ ঘটিকা হতে রাত্রী অনুমান ০৮:০০ ঘটিকা পর্যন্ত দুপচাঁচিয়া সিও অফিস কাঁচা বাজারে জনৈক মোঃ জহুরুল ইসলাম, পিতা-মৃত আব্দুল জব্বার, সাং-দুপচাঁচিয়া সরদারপাড়া, থানা-দুপচাঁচিয়া, জেলা-বগুড়া এর মুরগীর দোকানে গত প্রায় ৪/৫ বছর ধরে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে আসিতেছিল। তাদের গ্রামের মোঃ মোসলেম(৩০), পিতা-মোঃ মোস্তও উক্ত জহুরুল ইসলাম এর মুরগী দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন সংবাদদাতার ছেলে আব্দুল মালেক (১৫) ও মোঃ মোসলেম এক সাথে দুপচাঁচিয়া সিও মোড়ে কাজে যাওয়া আসা করিত।

গত ২৭/০৪/২০২৩ খ্রি. তারিখ সকাল অনুমান ০৬.০০ ঘটিকার সময় সংবাদদাতার ছেলে মৃত আব্দুল মালেক ও মোসলেম এক সাথে দুপচাঁচিয়া সিও মোড়ে মুরগীর দোকানে কাজে যায়। কিন্তু সারাদিন কাজ করার পরও প্রতিদিনের ন্যায় রাত্রী অনুমান ০৮:০০ ঘটিকা পার হয়ে গেলেও সংবাদদাতার ছেলে বাড়িতে ফিরে না আসায় সংবাদদাতা ও তার প্রতিবেশী মোঃ মোসলেম, পিতা-মোঃ মোস্ত এর বাড়িতে গিয়ে মোসলেমকে বাড়িতে পাইয়া সংবাদদাতা তার ছেলের খোঁজ করেন। ঐ সময় মোঃ মোসলেম জানায় যে, তার ছেলে মৃত আব্দুল মালেক(১৫) তার ছোট ভাই মোঃ মোক্তার হোসেন (২০) এর সাথে দুপচাঁচিয়া সিও বাজারে আছে, তারা একত্রেই বাড়িতে আসবে।

কিন্তু সংবাদদাতার ছেলে আব্দুল মালেক রাত্রীতে বাড়িতে ফিরে না আসায় পূনরায় সংবাদদাতা তার ছেলেকে খোঁজাখুজি করতে থাকেন এবং ২৮/০৪/২০২৩ খ্রি. তারিখ সকাল অনুমান ০৭:০০ ঘটিকার সময় দুপচাঁচিয়া সিও মোড়ে মোঃ জহুরুল ইসলাম এর মুরগী দোকানে গিয়ে মোঃ জহুরুল ইসলামকে তার ছেলে রাত্রীতে বাড়ি যাইনি বলে জানায়। তখন মোঃ জহুরুল ইসলাম জানায় যে, গত ২৭/০৪/২০২৩ খ্রি. তারিখ রাত্রী অনুমান ০৮:০০ ঘটিকায় আব্দুল মালেক ও মোক্তার হোসেন একত্রেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। সংবাদদাতা সহ তার নিকট আত্মীয়-স্বজন তার ছেলে আব্দুল মালেক(১৫) কে খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে ২৮/০৪/২০২৩ খ্রি. তারিখ সকাল অনুমান ০৮:০০ ঘটিকার সময় সংবাদদাতার গ্রামের জনৈক মোঃ আব্দুল খালেক(৫৫), পিতা-অজ্ঞাত, সাং-চেঙ্গা ছাতিয়াগাড়ী, থানা-দুপচাঁচিয়া, জেলা-বগুড়া জানায় যে, সংবাদদাতার ছেলে আব্দুল মালেক (১৫) এর মৃত দেহ কাঁদা মাখা অবস্থায় দুপচাঁচিয়া থানাধীন চেঙ্গা সাকিনে মোঃ লবির উদ্দিন এর পানির পাম্পের পার্শ্বে জনৈক মোঃ হারুন অর রশিদ, পিতা-মৃত ইসমাইল হোসেন, সাং-চেঙ্গা ছাতিয়াগাড়ী, থানা-দুপচাঁচিয়া, জেলা-বগুড়া এর ধান ক্ষেতের মধ্যে পড়ে আছে।

গ্রেফতারকৃত আসামী মাহবুব, মোক্তার ও তারেকগণ দুপচাঁচিয়া থানাধীন চেঙ্গা ছাতিয়াগাড়ী ও এর আশপাশ এলাকায় মাদক সেবন করে মোবাইল চুরিসহ বিভিন্ন ধরনের চুরি, ছিনতাই করে আসছিল। এ ঘটনা মৃত আব্দুল মালেক জানতে পেরে তার ভাই আসামী তারেককে নিষেধ করে কিন্তু তারেক আসামী মাহবুব ও মোক্তারের প্ররোচনায় সে নেশা সহ চুরি কাজ করতে থাকলে মৃত আব্দুল মালেক উক্ত ঘটনা পুলিশকে জানিয়ে দিবে বলে জানালে আসামী তারেক তার ভাই মৃত আব্দুল মালেককে চড় থাপ্পর মারে। উক্ত ঘটনার জের হিসেবে গত প্রায় ৩/৪ দিন আগে আব্দুল মালেক আসামী তারেককে মারপিট করে। ফলে আসামী তারেক অপর আসামী মাহবুব ও মোক্তারকে উক্ত ঘটনা জানালে তারা পরিকল্পিতভাবে আব্দুল মালেককে চেঙ্গা সাকিনে জনৈক মোঃ হারুন অর রশিদের ধান ক্ষেতের মধ্যে সুকৌশলে ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করতঃ আব্দুল মালেক এর ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন, যাহার মডেল নং-SYMPHONY Z42 সহ মৃতের নিকটে থাকা কিছু টাকা নিয়ে দুষ্কৃতিকারীরা পালিয়ে যায় বলে থানা পুলিশ সুত্রে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিগণ পেশাদার অপরাধী। মাহবুব আলম এর বিরুদ্ধে ০৪টি মাদক ও চুরি মামলা এবং মোক্তার এর বিরুদ্ধে ০১টি জুয়া মামলার তথ্য থানার নথি পত্রে পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশের নিকট থেকে জানা যায়। দুপচাঁচিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জনাব মোঃ আব্দুর রশিদ সরকার জানান যে, আজ গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করা হবে।

এই সংক্রান্তে সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার, আদমদীঘি সার্কেল জনাব মোঃ নাজরান রউফ প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান যে, মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশ সুপার, বগুড়া মহোদয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধায়ন ও সার্বিক দিক নির্দেশনায় থানার একটি চৌকস তদন্ত টিমের নিরলস প্রচেষ্টা এবং ব্যাপক পরিশ্রমের ফলাফল হিসেবে মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে নৃশংস এই হত্যা কান্ডের রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *