ময়মনসিংহের চায়না মোড়ে ব্যাটারী পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে সিসা, হুমকিতে পরিবেশ

ময়মনসিংহের চায়না মোড়ে ব্যাটারী পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে সিসা, হুমকিতে পরিবেশ

জাতীয়

গোলাম কিবরিয়া পলাশ, ময়মনসিংহ:

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা চায়না মোড় মটকিভাঙ্গা ব্রিজের পাশে কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ভাঙা হচ্ছে পুরাতন ব্যাটারী, আর এ ব্যাটারী পুড়িয়েই তৈরি হচ্ছে সিসা। ব্যাটারীর এসিডের তীব্র গন্ধে ভারী হয়ে ওঠছে আশপাশের এলাকা।

এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন আশপাশের মানুষ ও গবাদিপশু। দূষিত হচ্ছে নদীসহ পরিবেশ, এসব বর্জ্য যাচ্ছে আবাদি জমিতে। যথাযথ নিয়ম কানুন মেনে,
স্থান পরিবর্তন করে অন্যথায় সিটি কর্পোরেশনের বাইরে আশপাশের বাড়িঘরবিহীন জায়গায় কারখানাটি করলে ভালো হয় বলে জানাই এলাকাবাসী।

মোশাররফ মন্ডলের ব্যাটারীর কারখানাটি প্রভাব কাটিয়ে ময়মনসিংহ সিটির ভিতরে চায়না মোড় মটকিভাঙ্গা ব্রিজের পাশেই ইট দিয়ে চারদিক ঘিরে তৈরি করেছে সিসার কারখানা। সারি সারি পুরাতন ব্যাটারি রাখা হয়েছে স্তূপ করে। দিনের আলোয় মাস্কবিহীন শ্রমিকরা ব্যাটারী ভাঙার কাজ করলেও রাতে বেশ কয়েকটি বড় চুল্লিতে ব্যাটারী পুড়িয়ে তৈরি করা হয় সিসা।

গাইবান্ধা থেকে আসা এই কারখানার একজন শ্রমিক বলেন, ‘আমরা ১১ জন ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করার জন্য গাইবান্ধা থেকে এখানে এসেছি। কাজের ভিত্তিতে দিনমজুরিতে কোনো দিন ৫০০ টাকা কোনো দিন ৬০০টাকা পাই।

বিষাক্ত এসিডসহ ব্যাটারীর ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে ফসলি জমিতে ও ব্রিজের নিচে খালে বিলে। লোহার মোটা ছুরির সাহায্যে আলাদা করা হচ্ছে প্লাস্টিক ও সীসা। এভাবেই অবাধে চলছে কারখানায় সিসা তৈরির কাজ। ফলে জলাশয়, আবাদি জমিতে বিষাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে। এ থেকে সিসা যাচ্ছে মানবদেহে। ধোঁয়া থেকে আশপাশের গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে বাসা বাঁধছে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের। ফলে বিদ্যালয়গুলোতে কমছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার।

এ বিষয়ে উপজেলার সচেতন নাগরিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়৷ সিসা এবং এসিড জলাশয়ে গিয়ে মাছসহ পানি ধ্বংস করছে। পাশাপাশি আবাদিজমি, জলাশয়ে মিশছে সিসা ও এসিডের পানি। ফলে ফসলি জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে মানবদেহ।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইতিপূর্বে গড়ে তুলেছিল অবৈধ সিসা কারখানা। ব্যাটারী পুড়ার এসিডের তীব্র গন্ধে ৩ টি গরুর মৃত্যু হয়েছিল। পরে গরুর মালিকের সাথে টাকা পয়সা দিয়ে মিটমাট হয়ে যায়

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঐই এলাকা একজন বাসিন্দা জানান, সিসার মাধ্যমে যে বায়ুদূষণ হয়, এটি দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া মানুষের ব্রেইনের নারভাস সিস্টেমের ক্ষতি হচ্ছে। কিডনিতে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে এটি। বাতাসে অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। অক্সিজেন ক্যারিং ক্যাপাসিটি কমে যাচ্ছে। ফলে মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বাড়ছে। এই বায়ুদূষণ বাড়ন্ত শিশুদের ব্রেইনের হেম্পার করে। আর এসব কারণে প্রতিনিয়ত অক্সিজেন লেভেল কমে যাচ্ছে।

ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে এক ব্যক্তি। জেলা প্রশাসক বলেন , সিসা তৈরির কারখানার অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে অতিদ্রুত আইননুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *