মসজিদুল আকসাকে বরকতময় বলা হয়েছে কোরআনের যেসব আয়াতে

মসজিদুল আকসাকে বরকতময় বলা হয়েছে কোরআনের যেসব আয়াতে

ইসলাম

ইসলামীক ডেক্সঃ

ফিলিস্তিনের জেরুসালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের কাছে তৃতীয় পবিত্র স্থান। মক্কা-মদিনার পর সম্মানের কাতারে রাখা হয় এই মসজিদকে। এই মসজিদই ইসলামের প্রথম কেবলা। ইসলামের প্রথম যুগে মসজিদুল আকসাকে ঘিরেই নামাজ পড়তেন মুসলমানরা। এই মসজিদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মেরাজের স্মৃতি।

এ্ই মসজিদে নামাজ আদায়ের বিশেষ ফজিলতের কথাও বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদিসে বলেছেন, ‘মসজিদে হারামে এক নামাজ এক লাখ নামাজের সমান, আমার মসজিদে (মসজিদে নববী) এক নামাজ এক হাজার নামাজের সমান এবং বাইতুল মাকদাসে এক নামাজ ৫০০ নামাজের সমান।’ -(মাজমাউয যাওয়াইদ, ৪/১১) 

মসজিদুল আকসাকে কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে বরকতময় ভূমি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা বনি ইসরায়েল, সূরা মায়েদা, সুরা আম্বিয়া, সূরা আরাফ, সূবা সাবার মোট ৬টি আয়াতে মসজিদুল আকসাকে পবিত্র ভূমি বা স্থান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে তুলে তুলে ধরা হলো কোরআনের আয়াতগুলো-

সূরা বনি ইসরায়েল 

সূরা বনি ইসরায়েলের প্রথম আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

سُبۡحٰنَ الَّذِیۡۤ اَسۡرٰی بِعَبۡدِهٖ لَیۡلًا مِّنَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ اِلَی الۡمَسۡجِدِ الۡاَقۡصَا الَّذِیۡ بٰرَکۡنَا حَوۡلَهٗ لِنُرِیَهٗ مِنۡ اٰیٰتِنَا ؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ

পবিত্ৰ মহিমাময় তিনি, যিনি তার বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করালেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত যার আশপাশকে আমি করেছি বরকতময়, যেন আমি তাকে আমার নিদর্শন দেখাতে পারি; তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা। ( সূরা বনি ইসরায়েল, (১৭), আয়াাত, ১)

সূরা মায়েদা

পবিত্র কোরআনের সূরা মায়েদার ২১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

یٰقَوۡمِ ادۡخُلُوا الۡاَرۡضَ الۡمُقَدَّسَۃَ الَّتِیۡ کَتَبَ اللّٰهُ لَکُمۡ وَ لَا تَرۡتَدُّوۡا عَلٰۤی اَدۡبَارِکُمۡ فَتَنۡقَلِبُوۡا خٰسِرِیۡنَ

হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি লিখে দিয়েছেন তাতে তোমরা প্রবেশ কর এবং পশ্চাদপসরণ করো না, করলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে। (সূরা মায়েদা, (৫), আয়াত, ২১)

এখানে পবিত্র ভূমি বলতে কোন ভূমি বোঝানো হয়েছে, এ প্রশ্নে তাফসীরবিদদের বিভিন্ন মত রয়েছে। কারো মতে বায়তুল মুকাদ্দাস, কারো মতে কুদস শহর ও ইলিয়া।

কেউ কেউ বলেন, আরিহা শহর- যা জর্দান নদী ও বায়তুল মুকাদ্দাসের মধ্যস্থলে বিশ্বের একটি প্রাচীনতম শহর যা পূর্বেও ছিল এবং এখনও আছে। কোনো কোনো রেওয়ায়েতে আছে যে, পবিত্র ভূমি বলে দামেস্ক ও ফিলিস্তিনকে এবং কারো মতে জর্দানকে বোঝানো হয়েছে। কাতাদাহ বলেন, সমগ্র শামই পবিত্র ভূমি। (ইবন কাসীর, আত-তাফসীরুস সহীহ)

সুরা আম্বিয়া

পবিত্র কোরআনের সূরা আম্বিয়াতেও আল্লাহ তায়ালা মসজিদুল আকসাকে পবিত্র ও বরকতময় বলেছেন। এই সূরার দুইটি আয়াতে মসজিদুল আকসা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, 

 وَ نَجَّیۡنٰهُ وَ لُوۡطًا اِلَی الۡاَرۡضِ الَّتِیۡ بٰرَکۡنَا فِیۡهَا لِلۡعٰلَمِیۡنَ

এবং আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সে দেশে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি সৃষ্টিজগতের জন্য। (সূরা আম্বিয়া, (২১), আয়াত, ৭১)

বেশির ভাগ মুফাসিসিরের মতে, এ থেকে শাম (বর্তমানে সিরিয়া ও ফিলিস্তিন) দেশকে বুঝানো হয়েছে। যাকে শস্য-শ্যামলতা, ফলমূল, নদ-নদীর আধিক্য ও সেই সাথে বহু নবীর বাসস্থান হওয়ার কারণে বরকতময় ও কল্যাণময় বলা হয়েছে।

সূরা আম্বিয়ার আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَ لِسُلَیۡمٰنَ الرِّیۡحَ عَاصِفَۃً تَجۡرِیۡ بِاَمۡرِهٖۤ اِلَی الۡاَرۡضِ الَّتِیۡ بٰرَکۡنَا فِیۡهَا ؕ وَ کُنَّا بِکُلِّ شَیۡءٍ عٰلِمِیۡنَ

আর আমি সুলায়মানের জন্য অনুগত করে দিয়েছিলাম প্রবল হাওয়াকে, যা তার নির্দেশে প্রবাহিত হত সেই দেশের দিকে, যেখানে আমি বরকত রেখেছি। আর আমি প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কেই অবগত ছিলাম। (সূরা আম্বিয়া, (২১), আয়াত, ৮১) 

এই আয়াতে বরকত বা প্রভূত কল্যাণ রেখেছি বলে শাম দেশ তথা সিরিয়া, লেবানন ও ফিলিস্তিন এলাকাকেই বোঝানো হয়েছে। 

সূরা আরাফ

পবিত্র কোরআনের সূরা আরাফেও আল্লাহ তায়ালা মসজিদুল আকসাকে পবিত্র ও বরকতময় বলেছেন। বর্ণিত হয়েছে,

وَ اَوۡرَثۡنَا الۡقَوۡمَ الَّذِیۡنَ کَانُوۡا یُسۡتَضۡعَفُوۡنَ مَشَارِقَ الۡاَرۡضِ وَ مَغَارِبَهَا الَّتِیۡ بٰرَکۡنَا فِیۡهَا ؕ وَ تَمَّتۡ کَلِمَتُ رَبِّکَ الۡحُسۡنٰی عَلٰی بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ ۬ۙ بِمَا صَبَرُوۡا ؕ وَ دَمَّرۡنَا مَا کَانَ یَصۡنَعُ فِرۡعَوۡنُ وَ قَوۡمُهٗ وَ مَا کَانُوۡا یَعۡرِشُوۡنَ

আর আমি দুর্বল করে রাখা লোকেদেরকে সেই যমীনের পূর্বের আর পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিলাম যাতে আমি কল্যাণ নিহিত রেখেছি। এভাবে বনি ইসরায়েলের ব্যাপারে তাদের ধৈর্য ধারণের কারণে তোমার প্রতিপালকের কল্যাণময় অঙ্গীকার পূর্ণ হল আর ফেরাউন ও তার লোকজনের গৌরবময় কাজ ও সুন্দর প্রাসাদগুলোকে ধ্বংস করে দিলাম।  (সূরা আরাফ, (৭), আয়াত, ১৩৭)

বনি ইসরায়েলকে ফেরাউন দাস বানিয়ে রেখেছিল। আল্লাহ তায়ালা তাদের তার কবল থেকে মুক্ত করে রাজত্ব্ দান করেছিলেন। এখানে রাজ্য বা দেশ বলতে শাম দেশের এলাকা ফিলিস্তিনকে বুঝানো হয়েছে।

 সূরা সাবা

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের ৩৭ নম্বর সূরা, সূরা সাবাতেও মসজিদুল আকসাকে পবিত্র ও বরকতময় বলেছেন। বর্ণিত হয়েছে,

 وَ جَعَلۡنَا بَیۡنَهُمۡ وَ بَیۡنَ الۡقُرَی الَّتِیۡ بٰرَکۡنَا فِیۡهَا قُرًی ظَاهِرَۃً وَّ قَدَّرۡنَا فِیۡهَا السَّیۡرَ ؕ سِیۡرُوۡا فِیۡهَا لَیَالِیَ وَ اَیَّامًا اٰمِنِیۡنَ

আর তাদের ও যেসব জনপদের মধ্যে আমি বরকত দিয়েছিলাম, সেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে আমি দৃশ্যমান বহু জনপদ স্থাপন করেছিলাম এবং ওই সব জনপদে ভ্রমনের যথাযথ ব্যবস্থা করেছিলাম। বলেছিলাম, তোমরা এসব জনপদে নিরাপদে ভ্ৰমণ কর দিনে ও রাতে। (সূরা সাবা, (৩৭), আয়াত, ১৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *