রংপুর প্রেসক্লাবে ঝুলছে তত্ত্ববধায়ক মন্ডলীর দেয়া তালা

জাতীয়

শরিফা বেগম শিউলী স্টাফ রিপোর্টার:

প্রেসক্লাব রংপুর অফিসে বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের নির্দেশনায় তত্ত্বাবধায়ক কমিটির সদস্য সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত হলে প্রেসক্লাব রংপুর অফিসের গেটে তালা বদ্ধ পায়। পরে বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের ফোন দিলে তারা অফিসে না এসে তালবাহানা শুরু করে সময় ক্ষেপণ করে।

এক ঘন্টা অপেক্ষা করলেও প্রেসক্লাব অফিসের কেউ আসেনি। পরে তত্ত্বাবধায়ক কমিটির আহবায়ক এর কাছে পরামর্শ নিয়ে গেটে চিঠি টাঙ্গিয়ে তালা বদ্ধ করে চলে যায়। রোববার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে প্রেসক্লাব কমপ্লেক্সের প্রেসক্লাব অফিসের মেইন গেটে এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

উক্ত সময় উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক অনিল চন্দ্র বর্মন এবং সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মাহমুদুল ইসলাম এর নেতৃত্বে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। উল্লেখ্য এই যে, সংগঠন পরিচালনায় আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম প্রতীয়মান হওয়ায় প্রেসক্লাব রংপুরের কমিটির সদস্যদের সাময়িক বরখাস্ত করে তত্ত্বাবধায়ক গঠন করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর।

চার সদস্যের তত্ত্বাবধায়ক কমিটিতে রয়েছেন, আহবায়ক, পরিচালক, বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়,রংপুর, সদস্য- অতিরিক্ত পরিচালক , বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়,রংপুর, উপপরিচালক বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়,রংপুর, সমাজসেবা অফিসার, শহর সমাজসেবা কার্যালয়,রংপুর।

বুধবার (১৫.০১.২৫) সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ সাইদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এক পত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত পত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েক মাস পূর্বে প্রেসক্লাব রংপুর (নিবন্ধন নং-রংপুর/৩৫৯/৯১) পক্ষ থেকে আলাদা দুইটি কমিটি অনুমোদনের জন্য উপপরিচালক সমাজসেবা কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়।

বিষয়টি সমাজসেবা অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হলে তদন্তের জন্য সংস্থাটির একজন উপ-পরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা সংস্থাটি ( প্রেসক্লাব রংপুর) পরিচালনার ক্ষেত্রে আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম প্রতীয়মান হয়েছে বলে মতামত প্রদান করেন।

দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে সেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ  (রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ধারা ৯(১) মোতাবেক সংস্থার  (প্রেসক্লাব) পরিচালনামন্ডলীকে সাময়িক বরখান্ত করে। এবং ধারা ৯(২) মোতাবেক সমাজসেবা অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় পরিচালককে আহবায়ক করে চার সদস্যের তত্ত্বাবধায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক ও  শহর সমাজসেবা অফিসার। আদেশ প্রাপ্তির পর দায়িত্ব গ্রহণের পর গঠনতন্ত্র অনুসারে সদস্য তালিকা হালনাগাদসহ খসড়া ভোটার তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন। পরে নির্বাচিত কমিটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।

এছাড়াও দেশের স্বনামধন্য অডিট ফার্ম নিয়োগের মাধ্যমে আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরুপন করবেন। কোন সদস্যের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সংস্থার স্বার্থে বিদ্যমান গঠনতন্ত্রটির প্রয়োজন হলে সংশোধনী এনে তা নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন উদ্যোগ নিতে পারবেন।

হাতে গোনা কিছু সাংবাদিক ও অসাংবাদিকদের নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে প্রেসক্লাব রংপুরকে কুক্ষিগত করে রাখে একটি মহল। জুলাই আন্দোলনের পর বৈষম্যের শিকার সাংবাদিকরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন শুরু করলে প্রেসক্লাবের অসাংবাদিকদের রোষানলে পড়ে হেনস্তার শিকার হন বেশ কিছু সাংবাদিক। এমনকি রংপুর সার্কিট হাউসে তথ্য উপদেষ্টার মতবিনিময়সভা ভণ্ডুল করেন এই অপসাংবাদিকরা।

আন্দোলনকারীরা জানান, প্রেসক্লাবে যে কয়েকজন সাংবাদিক আছেন তাদের মধ্যে ৭ জন শিক্ষক ১ জন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত নন এমন রয়েছেন ৫ জন। তারা বলেন, সমাজসেবার সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই।

আশাকরি প্রেসক্লাব রংপুর হবে সাংবাদিকদের মিলন কেন্দ্র। এদিকে প্রশাসক নিযোগের খবর সাংবাদিকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে প্রেসক্লাব ও এর আশপাশ এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস করেন অধিকার বঞ্চিত সাংবাদিকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *