”সুনামগঞ্জ থেকে,আমির হোসেন: আমি চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস শিল্প সাধনা করি সেই শৈশব থেকে। জন্মস্থান বরিশাল ঝালকাঠি,শিল্পী হওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিলাম খুলনাতে ১৯৯৯ সালে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে। বাবা বাড়ি না থাকায় মা বাধা দিয়ে আটকাতে পারল না ।শিল্পী হওয়া খুব কঠিন কাজ ।ছবি আঁকা খুব সাধারণ একটি বিষয়। ইচ্ছা করলে যে কেউ ছবি আঁকতে পারে কিন্তু শিল্পী হতে হলে তার মনুষত্ব বিকাশ ঘটাতে হবে আগে।
আমার যত স্বপ্ন যত চিন্তাভাবনা সবকিছুই লিখে রাখার চেষ্টা করি। ২০১১ সালে এসে একটি ফেসবুক আইডি খুলে দেয় আমার এক শিক্ষার্থী বিশ্বজিৎ রায় ।সেই থেকে আমার যত শিল্পচর্চা, লেখালেখি জগতের যা কিছু সবকিছুই যেন আমার ফেসবুকে একটি ডাইরির মতো সংরক্ষণ করে রাখার স্থান। গত ৩০শে অক্টোবর ২০২২ বাবাকে হারিয়ে খুব ব্যতীতভাবে সময়কে অতিবাহিত করছি। হঠাৎ করে ফোনেও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। আমার ছেলে সৌহার্দ্য বিশ্বাস ফোনে একটি সফটওয়্যার ইনস্টল করে Google Authenticator সে ক্লাস নবম শ্রেণীতে পড়ে। না বুঝেই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করেছিল ।
সুবিধা ছিল আমার ফেসবুক টি কেউ কখনো কোন কারনে হ্যাক করে নিতে পারবে না। আমার ফোনটি বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়া শুরু করলো বাধ্য হলাম ফোনটি রিসেট মারতে। রিসেট মারলাম ফোনের কিছুটা সমস্যার সমাধান হলো। সমস্ত কিছুই ফিরে পেলাম কিন্তু যখনই আমি ফেসবুক ওপেন করতে যাই তখনই কোনভাবেই আমি আর লগইন করতে পারিনা ।ফেব্রুয়ারি মাসের ৯ তারিখ থেকে আমি এক অস্বস্তিকর যন্ত্রণা নিয়ে জীবন যাপন করা শুরু করলাম। কারণ ওই ফেসবুকেই ছিল আমার সমস্ত শিল্পচর্চা সাধনার সংরক্ষণ স্থান ।
যা কিছু তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছিল বেশিরভাগ তথ্য এবং আমার যত রাত জাগা জীবনের অনেক রাতের একাকীত্ব প্রহরগুলো ফেসবুকে ধারণ করতাম লেখার মাধ্যমে।গান ,কবিতা, ছবি আঁকা সবকিছুই ফেসবুকে সংরক্ষণ করে রাখ তাম। ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখ থেকে নতুন আরেকটি যন্ত্রনা শুরু হলো। সারাদিন খুবই কর্মব্যস্ততায় সময় কাটাতাম ।আমি আমার পরিচিত জন যারা ছিল তাদের সবার কাছে জানার চেষ্টা করলাম কি করে এই বিষয় থেকে আমি সমাধান পাবো।দুমাস পর্যন্ত ঘাটে ঘাটে শুধু ঘুরেছি কোনোভাবেই এর সমাধান হয়নি। সর্বশেষ একজন সন্ধান দিল নিউমার্কেট গেলে এর সমাধান মিলবে।
তখন নিজেও ভাবলাম নিউ মার্কেটে হয়তো অনেক অভিজ্ঞ লোক থাকে। ওখানে গিয়ে লাভের চেয়ে ক্ষতিটাই বেশি হলো। নিজের আইডিটা যেগুলো গণমাধ্যমে সবাই দেখতে পারতো সেই পোস্টগুলো আর দেখা সম্ভব হচ্ছে না ।কারণ ফেসবুক আইডিটা তারা যে বারবার চেষ্টা করেছে বিভিন্ন মাধ্যমে বের করার তাতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আমার আইডিটি ব্লক করে দিয়েছে৷
তাই তার চিন্তা হলো। আমাকে সে কষ্ট থেকে মুক্ত করার জন্য আমি তাকে কিছু টাকা দেওয়ার কথা যখনই বললাম তখনই আমাকে বলল ভাই আপনি আর একবারও এই কথা বলবেন না। আপনার ফেসবুক ফিরে পাওয়ার দরকার ছিল আর আমার কর্তব্য ছিল ফিরিয়ে আনার ।তাই আমি আমার স্থান থেকে আমার কর্তব্য পালন করেছি ।আপনি তো আমাকে চকলেট খাওয়াইছেন আর কিছুই দরকার নাই ।আমি অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমি তাকে বললাম বড় ভাই হিসেবে যা দিয়েছি এটি নিতেই হবে।
আমি কিছু টাকা নিয়ে তাকে দেওয়ার চেষ্টা করলাম। তখন সে খুব উচ্চস্বরে বলে উঠলো তবে কিন্তু ভাই আবার ফেসবুক ব্লক করে দিব। কোনটা আপনি চান ।আমি কিছুই বলতে পারলাম না। তখন আমি বললাম পরে আবার আসবো। শুধু বললো আপনার যখন ইচ্ছা মনে হয় আপনি আসবেন ।তাই মামুন ভাইয়ের সাথে শনিবারে দেখা করব এমন কথা বলেই সেখান থেকে বের হয়ে আসলাম ।কি যে আনন্দ লিখে প্রকাশ করতে করা যাবে না। আমি যেন তার এই কৃতজ্ঞতা কখনো না ভুলে যাই। তার জন্য আমি লিখে রাখার চেষ্টা করলাম ।
আর এই জন্য কেউ ভুল করে না জেনে না বুঝে কোন সফটওয়্যার ইউজ করা উচিত না এটাই হলো লেখার মূল কারণ ।আমার আরো ফেসবুক আছে আমার প্রতিষ্ঠানের নামে।সেগুলো হারিয়ে গেলে আমি মোটেও চিন্তিত হতাম না। কারণ ফেসবুক যখন ইচ্ছা তখনই একটি খুলে নেওয়া যায় ।আমি কাউকে বুঝাতে পারিনি আমার ফেসবুকটিতে কত সম্পদ রয়েছে যা এক সময় হতে পারে অমূল্য রতন। কারণ শিল্পীরা যা সৃষ্টি করে ভবিষ্যতে তা অমূল্য রতন হয়ে দাঁড়ায়।আমি একজন শিল্প সাধক মানুষ আমার শিল্পচর্চা আমার সকল সাধনা এই ফেসবুকের মধ্যেই ছিল ।
তাই আমি আবারো মামুন ভাইকে ধন্যবাদ জানাই এবং তার এই কৃতজ্ঞতা আমি যেন কখনো না ভুলে যাই তার মতো যুবক একদিন এই দেশের অনেক সুনাম বয়ে আনবে এটা আমার বিশ্বাস। আমি তাকে বড় ভাই হিসেবে আশীর্বাদ করি পড়াশোনা করে অনেক বড় হও এবং দেশের জন্য ভালো কাজ কর। তোমার পরিবারের সকল সদস্যের মঙ্গল কামনা করি।তারপরে আমি ফোনটি নিয়ে বাসায় আসলাম। বাসায় এসে দুমাস পরে আমার ফেসবুকটি ফিরে পেয়ে ভেবেছিলাম অসংখ্য মানুষ হয়তো আমাকে খুজছে।
দুইমাস ফেসবুকে না ঢোকার কারন জানতে চাইবে এমনটাই আশা করেছিলাম। কিন্তু ম্যাসেঞ্জার ভিজিট করে দেখতে পেলাম অসংখ্য ম্যাসেজ।গত ৫ই মার্চ আমার জন্মদিন ছিল। জন্মদিন উপলক্ষে সবাই শুভেচ্ছা জানিয়েছে। তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই শুধু মাত্র একটি ম্যাসেজ ছিল ভিন্ন।৪৯৮২জন বন্ধুর মধ্যে শুধু মাত্র একজনই জানতে চেয়েছে আমার কি হয়েছে?আমি অনলাইনে আসিনা কেন? তিনি হলেন খুলনার একজন জনপ্রিয় নাট্য অভিনেতা কামরুল কাজল। তিনি আমার একজন ভালোবাসার মানুষ।
আজ থেকে আমার হৃদয়ে আরও স্থান করে নিয়েছে। তিনি হলেন প্রকৃত বন্ধু । গতো দুই মাসের মধ্যে আমি মরে গেলে আমার হাড়ও মাটির সাথে মিশে যেত ফেসবুক হারিয়ে লচের চেয়ে শিক্ষাও কম হয়নি আমাকে যারা চেনেন আমাকে যারা ভালবাসেন সকলের মঙ্গল কামনা করে আমার এই লেখাটির এখানে ইতি টানছি।