ফলো আপ তাহিরপরে যুবক সাকিবকে পিছিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেতা সহ ১০ জনের নামে হত্যা মামলা

ফলো আপ তাহিরপরে যুবক সাকিবকে পিছিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেতা সহ ১০ জনের নামে হত্যা মামলা

জাতীয়

আমির হোসেন,

সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার আলোচিত সাকিব হত্যাকান্ডের ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেতা সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। গতকাল (২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার) মধ্যরাতে নিহতের পিতা মজিবুর রহমান ওরপে বাটি মজিবুর তাহিরপুর থানায় এ হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় আসামিরা হলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ঘাগটিয়া গ্রামের মৃত সাদেক আলীর ছেলে মোশারফ হোসেন তালুকদার (৫৮),মহিনুর তালুকদার (৫৩), মোশাহিদ তালুকদার (৫৫), একই গ্রামের মহিনুর তালুকদারের ছেলে রফি তালুকদার (২৯), মোশারফ তালুকদারের ছেলে মোনায়েম হোসেন তালুকদার রাজু (৩৪) সহ ১০ নাম উল্লেখ করে এছাড়া আরো ৩/৪ জনকে এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

তবে এ ঘটনার দুইদিন পেরিয়ে গেলেও এখন কোন আসামি ধরতে পারেনি পুলিশ।

তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ ইফতার হোসেন হত্যা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ মামলায় এখনও কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। তবে পুলিশ সর্বোচ্ছ চেষ্টা করছে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে।

প্রসঙ্গত, পূর্ব বিরোধের জের ধরে গত সোমবার মধ্যরাতে সাকিব মিয়া (২৫) নামে এক যুবককে রাস্তা থেকে তুলে আওয়ামীলীগ নেতা মোশারফ হোসেন তালুকদার এর বাড়িতে নিয়ে রাত ভর অমানবিক নির্যাতন করে পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে হত্যা করে মোশারফ বাহিনীর লোকজন। নিহত সাকিব উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগটিয়া টেকেরগাঁও গ্রামের মজিবুর রহমান ওরপে বাটি মজিবুরের ছেলে। এদিকে সাকিবরক হত্যার পর মঙ্গলবার সকাল থেকেই বাড়িঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে যায় শোশারফ ও তার লোকজন।

জানা যায়, উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগটিয়া গ্রামের মোশারফ হোসেন তালুকদারের সঙ্গে একই গ্রামের মজিবুর রহমানের দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্ধ চলে আসছিল। ইতিপূর্বে দু’পক্ষের মধ্যে আরও কয়েকবার রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের ঘটনাও ঘটেছে। দু’পক্ষের মধ্যে থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে নিহত সাকিব বাড়ি থেকে চক বাজারে যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে আসে।

রাত ১ টার দিকে সাকিবের পিতা মজিবুর রহমানের কাছে ফোন আসে সাকিব কে মোশারফ তালুকদারের বাড়িতে মারপিট করছে । খবর পেয়ে মজিবুর রহমান গ্রামের তৃতীয় পক্ষের দুইজনকে সঙ্গে নিয়ে মোশারফ তালুকদারের বাড়িতে যেয়ে তার ছেলেকে ফেরত চান। মোশারফ তালুকদারের লোকজন সাকিবকে তার পিতার কাছে না দিয়ে উল্টো মজিবুর রহমানকে মারপিট শুরু করলে আত্মরকার্থে দৌড়ে চলে আসে।

পরে সংবাদ পেয়ে রাত দুইটার দিকে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মোশারফ তালুকদারের বাড়ি থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় সাকিবকে উদ্ধার করে। গুরুতর আহত অবস্থায় মোশারফের লোকজন তাকে প্রথমে রাতেই তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ভর্তি করে। পরে এখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রেরন করে।

পরদিন মঙ্গলবার সকালে সিলেট উসমানি হাসপাতাল নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করলে শাকিবের লাশ হাসপাতালে রেখেই মোশারফের লোকজন পালিয়ে যায়।
নিহতের মা তেরাবজুন বেগম বলেন, সোমবার সন্ধার দিকে চক বাজারে যাওয়ার কথা বলে সাকিব বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পূর্ব শত্রæতার জের ধরে আমার অবুঝ ছেলেকে মোশারফের লোকজন রাস্ত থেকে তুলে তাদের বাড়িতে নিয়ে সারা রাত পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে মেরে ফেলেছে। মোশারফ গংরা গত বছর আগেও আমার ছেলেকে রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে এবং আমার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে।

মোশারফ আওয়ামীলীগ নেতা ও এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার কেউ তার বিরোদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না। কেউ কথা বলইে মোশারফ বাহিনীর লোকজন চালায় অমানবিক নির্যাতন ও হামলা মামলা। তিনি বলেন, আমার ছেলের খুনিদের বিচার চাই।

নিহতের বাবা মজিবুর রহমান বলেন, পূর্ব সুত্রুতার জের ধরে বাড়িতে নিয়ে পিটিয়ে দু-হাত দু-পা ভেঙে মেরে ফেলেছে আমার ছেলেকে। খবর পেয়ে রাত ১টার দিকে মোশারফ তালুকদারের বাড়িতে গিয়ে তাদের হাত পা ধরে আকুতি মিনতি করেছি ছেলেকে উদ্ধারের জন্য। কিন্তু তারা আমার ছেলেকে ফেরত না দিয়ে উল্টো আমাকে মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে পুলিশ এসে আমার ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাটায়। সকালে শুনি আমার ছেলে মারা গেছে। মঙ্গলবার মধ্য রাতে ১০জনকে আসামি করে তাহিরপুর থানায় একটা হত্যা মামলা করেছি।

উল্লেখ্য: ২০২১ সালের ১ ফেব্রæয়ারী মোশারফের ভাই মোশাহিদ যাদুকাটা নদীর পাড় কেটে ও কোয়ারী করে অবৈধভাবে বালু পাথর উত্তোলন করার সময় দৈনিক সংবাদের তাহিরপুর প্রতিনিধি ও তাহিরপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন রাফিকে ছবি তোলার কারণে প্রকাশ্য দিবলোকে মোশারফ ছোট ভাই মোশাহিদসহ তার বাহিনীর লোকজন তাকে হাত-পসহ দড়ি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন করে। যার মামলা এখনো আদালতে চলমান আছে। শুধু তাই নয়! তাহিরপুর থানা ও সুমাগঞ্জ আদালতে তাদের বিরোদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *