জামানতের টাকা দিতে টালবাহানা, যেকোন সময় পালাতে পারে অবৈধ এনজিও সোনারতরী

জামানতের টাকা দিতে টালবাহানা, যেকোন সময় পালাতে পারে অবৈধ এনজিও সোনারতরী

রাজশাহী

এসএম রুবেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ জনগণের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে টালবাহানা করছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী অনিবন্ধিত ও অবৈধ এনজিও সোনারতরী স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নয়ন সোসাইটি। সম্প্রতি জেলা থেকে ৩৫ হাজার গ্রাহকের ১০৫ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার মতোই যেকোন সময় পালাতে পারে সোনারতরী স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নয়ন সোসাইটি, এমনটাই শঙ্কা করছেন ভুক্তভোগী গ্রাহক ও স্থানীয়রা।

জানা যায়, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি বা এমআরএ’র নিবন্ধন ছাড়াই সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ২০১৫ সাল থেকে ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম পরিচালনা করছে সোনারতরী স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নয়ন সোসাইটি। সদর উপজেলার রানিহাটি ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর হাট ও শিবগঞ্জ উপজেলার গোলাপের হাটে দুইটি শাখা খুলে অবৈধ এনজিও-র কার্যক্রম পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

সোনারতরী স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নয়ন সোসাইটির মালিক মনিরুল ইসলাম অতিরিক্ত লাভ দেয়ার প্রলোভনে জনগনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন। গত এক বছর ধরে জনগণের এসব জামানতের টাকা ফেরত দিচ্ছে না মনিরুল ইসলাম। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রেখেছে অফিস।

শুধুমাত্র জয়েন্ট স্টকের লাইসেন্স নিয়ে এমন অবৈধ ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এমনকি জয়েন্ট স্টকের লাইসেন্সও হালনাগাদ নেই সোনারতরী স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নয়ন সোসাইটির। এনিয়ে হতাশায় দিন পার করছে গ্রাহকেরা। দিনমজুর ফয়সাল আজম নামের এক গ্রাহক জানান, সংসার পরিচালনা করে দৈনিক কিছু টাকা বাঁচিয়ে সেখানে জমা রাখতাম।

এভাবে গত কয়েক বছরে প্রায় ৮৫ হাজার টাকা জমা হয়। এখন দরকারের সময় টাকা চাইলেও পাচ্ছি না। টাকা দিব দিচ্ছি বলে নানরকম টালবাহানা করছে। এর একটি সুষ্ঠ সমাধান চাই। বিধবা ফাতেমা বেগম বলেন, গরু-ছাগল পালন করে যা উপার্জন হয়, তা বিক্রি করে টাকা জমা রেখেছিলাম। অন্যদিকে,ঘর-বাড়ি ভেঙে পড়ছে। এখন ঠিক করব, তারও কোন উপায় নাই। কারন এখন টাকা ফেরত দিচ্ছে না। কার কাছে যাব, কোথায় যাব কিছুই বুঝতে পারছি না।

ভুক্তভোগী ফেরদৌস সিহানুক ও আলমগীর হোসেন জানান, অনেক কষ্টে জমানো টাকা রেখেছিলাম সোনারতরী স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নয়ন সোসাইটি নামের ভুয়া এনজিও-তে। সম্প্রতি কয়েকটি এনজিও তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে পালিয়ে গেছে। তাই ভয় হচ্ছে কখন তারাও পালিয়ে যায়। দুই ভাইয়ের সাড়ে তিন লাখ টাকা রয়েছে। মমিরুল ইসলামের এমন টালাবাহানা আমাদেরকে আরও শঙ্কার মধ্যে ফেলেছে।

শুধু আমরাই নয়, আমাদের মতো আরও অন্তত কয়েক হাজার গ্রাহক এমন অবস্থায় রয়েছে। যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর প্রধান কার্যালয়ের অতিরিক্ত নিবন্ধক (যুগ্ম সচিব) সন্তোষ কুমার পন্ডিত বলেন, জয়েন্ট স্টকের লাইসেন্স শুধুমাত্র বৈধ ব্যবসা করার জন্য প্রদান করা হয়। এই লাইসেন্স নিয়ে কেউ যদি ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম করে তাহলে তা মারাত্মক অপরাধ।

এমনকি আমাদের নিবন্ধন দাখিল করে তারা যদি এমআরএ’র লাইসেন্স আবেদন করে সেটাও নিয়ম বর্হিভূত। যেসব প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবিষয়ে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি-এমআরএ’র সুপারভিশন শাখার সিনিয়র সহকারী পরিচালক সুচিতা নাসরিন জান্নাত বলেন, এমআরএ’র নিবন্ধন ছাড়া কোনপ্রকার ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না।

নিবন্ধন পাওয়ার আগে ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম পরিচালনা করার কোন নিয়ম নেই। এমন কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন,ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম পরিচালনার আগে সেই প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে এমআরএ’র নিবন্ধন নিতে হবে। তা না হলে ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম সম্পূর্ণ অবৈধ। জনগণকে এসব প্রতিষ্ঠানে টাকা না রাখতে বিভিন্নভাবে জনসচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়াও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে এবিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *