এসএম রুবেল,চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
সাইফুল ইসলাম গাজীর কারনে আমার পরপর তিনটি সংসার ভেঙেছে। এরপর বিয়ে করে দুই বছরের সংসার আমার। কিন্তু কয়েকদিন থেকে হঠাৎ করেই যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। লোকজনের মাধ্যমে খবর দিচ্ছে, আমাকে নাকি ডিভোর্স দিবে। কিন্তু যার কারনে আমার তিনটি সংসার ভেঙেছে, তার সাথেই আমি সংসার করতে চাই।
কথাগুলো বলছিলেন,সংসারের দাবিতে অনশনে থাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের হোসেনডাঙ্গা গ্রামের মৃত দেলখোস আলীর মেয়ে কুলসুম খাতুন (৩০)।
বুধবার (১৭ মে) সকাল ১০টা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার শিয়ালা এলাকার মৃত রবিউল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম গাজীর সাথে সংসার করার দাবিতে অনশন করেন কুলসুম খাতুন।
গ্রাম্য চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম গাজী অগ্রণী সেচ প্রকল্প পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সমিতি লিমিটেডের সভাপতি। বুধবার (১৭ মে) অগ্রণী সেচ প্রকল্প পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সমিতি লিমিটেডের অফিসে এই অনশন করেন তিনি। এর আগে একই দাবিতে মঙ্গলবার (১৬ মে) রাতে সাইফুল ইসলাম গাজীর বাসায় গেলে তার পরিবারের লোকজন মারধর করে তাড়িয়ে দেয়।
অনশনে থাকা কুলসুম খাতুন বলেন, আমাদের গ্রামে ওষুধের ফার্মেসী থাকার সুবাদে প্রায় ১৮ বছর ধরে তার (সাইফুল ইসলাম গাজী) সাথে চলাফেরা। এর সূত্র ধরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর যেখানেই আমার বিয়ে হয়, তা বিভিন্ন উপায়ে ভেঙে দিতে নানরকম প্রলোভন ও চাপ দেয়। এমনকি আমার তিনটি সংসারে বিচ্ছেদ ঘটায় সাইফুল ইসলাম গাজী। এরপর ২০২১ সালের ০১ মার্চ আমাদের বিয়ে হয়৷
তিনি আরও বলেন,বিয়ের পর গত দুই বছর ধরে আমাদের সংসার ভালোই চলছিল। যা সাইফুল ইসলাম গাজীর প্রথম স্ত্রী ও তার পরিবার জানতো। বিভিন্ন সময়ে তার বাসায় উঠানোর কথা বললে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে থামিয়ে রাখে। বাচ্চা নেয়ার কথা বললে এড়িয়ে যায়। তবে সংসারের খরচ দেয়া ও যাতায়াত স্বাভাবিক ছিল। গত দুই দিন থেকে হঠাৎ করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় এবং লোকজন দিয়ে আমাকে ডিভোর্স দেয়ার কথা জানায়। কিন্তু যার কারনে আমার তিনটি সংসার ভেঙেছে, আমি তার সাথেই সংসার করতে চাই।
জানা যায়, গ্রাম্য চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম গাজীর পূর্বের একটি সংসার রয়েছে। সেখানে তার দুই ছেলে ও স্ত্রী রয়েছে। কুলসুম খাতুনের মা জোসনা বেগম জানান, মেয়েটিকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি। গাজীর কারনে তিনটি সংসার ভেঙেছে। তাকে (সাইফুল ইসলাম গাজী) অনেক অনুরোধ করেছি, আমার মেয়ের জীবন থেকে সরে যেতে, কিন্তু সে শুনেনি। উল্টো দায়িত্ব নিয়ে আগের সংসারগুলোর ডিভোর্স করিয়েছে। এক সপ্তাহ আগে মেয়েটার বাবা মারা গেছে। আবার গাজী এখন নিতে চাই না। এমনটা হলে কোথায় যাবে আমার মেয়েটি।
সাইফুল ইসলাম গাজী ও কুলসুম খাতুনের বিয়ের সাক্ষী তৈমুর রহমান বলেন, দুই বছর আগে হওয়া বিয়ের সাক্ষী ছিলাম আমি। তাদের সংসারও ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এখন গাজী ডিভোর্স দিতে চাই না। আবার তার বাড়িতে গেলেও মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে।
কুলসুমের ভাই রমজান আলী জানান, এভাবে বারবার সংসার ভেঙে এমন আচরণ করাটা অন্যায়। আমরা চাই, এর একটি সুষ্ঠু সমাধান হোক। সে এখন কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে? তার প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বিচার চাই আমরা।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন, আমরা জানি, তাদের বিয়ে হয়েছে এবং সংসারও করছে। কিন্তু হঠাৎ করে কি হলো জানি না, সংসার বিচ্ছেদ করতে চাই। ভরণপোষণ দেয় না।
অগ্রণী সেচ প্রকল্প পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম গাজী বলেন, কুলসুম আমার দ্বিতীয় স্ত্রী। তবে ভরণপোষণ বা সংসারের দাবিতে অনশনের বিষয়ে জানতে চাইলে, ব্যস্ত রয়েছি বলে ফোনের সংযোগ বিছিন্ন করে দেন সাইফুল ইসলাম গাজী।
ঝিলিম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. শরিয়ত আলী ও সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য শওকত আরা সুইটি জানান, বিয়ের বিষয়টি আমরা জানি। তারা দুই বছর ধরে সংসারও করছে। কিন্তু কয়েকদিন থেকে যোগাযোগ বিছিন্ন করে দেয়। তাই আজ (বুধবার) সংসার করার দাবিতে তার অফিসে গিয়ে অনশন করেছে কুলসুম। এর আগে কালকে রাতে তার বাসায় মারধরের বিষয়টিও আমাদেরকে জানিয়েছে। এ বিষয়ে কুলসুম লিখিত অভিযোগ দিলে সাইফুল ইসলাম গাজীর এলাকার জনপ্রতিনিধির সাথে বসে স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।