রাজশাহীর পবা উপজেলায় পুকুর সংস্কারের নামে মাটি বিক্রির মহাউৎসব

রাজশাহী

নিজস্ব প্রতিবেদন:

রাজশাহী মহানগরীর পবা উপজেলায় রাতের আঁধারে পুকুর সংস্কারের নামে চলছে মাটি বিক্রির মহোৎসব । প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে থাকায় আদালতের আদেশ কে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে একের পর এক ফসলি জমিকে শ্রেণি পরিবর্তন না করে পুকুর খনন ও কোন পুরাতন পুকুর সংস্কারের নামে মাটি বিক্রির অভিযোগ উঠে আসে সাধারণ মানুষের।

২৬ মে (রবিবার) আনুমানিক রাত ১২:২৫ মিনিটে পবা উপজেলার ভালাম এলাকায় সরজমিনের যেয়ে এলাকাবাসীর কাছে জানা যায়, এখানে দুইটি পুকুর সংস্কারের নামে চলছে মাটি বিক্রির মহোৎসব। উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), এসি ল্যান্ড ও থানা কন্টাক করে এরা পুকুর খনন করছে রাতের আধারে ।

ইউএনও লিখিত অনুমোদন না দিলেও মৌখিকভাবে অনুমোদন দেয় সেজন্য দিনে না করে রাতের আঁধারে পুকুর খননের কাজগুলো চলমান থাকে। ধোলাই নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ আর মাটি পরিবহনের জন্য আমাদের অনেক কষ্টে পাওয়া এই রাস্তাগুলো নষ্ট হতে চলেছে। থানায় বা ভূমি অফিসে অভিযোগ দিলে কোন কাজ হয় না কারণ তারা আগেই ম্যানেজ হয়ে আছে ।

ফোন দিলেই বলে দেখব, দেখছি ,ব্যবস্থা নিচ্ছি অথবা ভিডিও দেন কিংবা লিখিত অভিযোগ দেন আমরা ব্যবস্থা নেব। স্বপনের পুকুরটি শেষ হয়েছে দুই দিন আগে এখন রাজুরটি চলমান আছে। রাজু অল্পসংখ্যক করে মাটি বের করে ইট ভাটায় দিচ্ছে কিন্তু স্বপন একের পর এক কাঁকড়া গাড়ি বের করে গেছে মাটি ভর্তি করে ইটভাটার দিকে। দুই দিন আগে রাতে বৃষ্টি হওয়ায় পুরা রাস্তা কাদায় নষ্ট হয়েছিল সকালে আমরা চলাচল করতে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি।

সরজমিনে ভালামের তথ্য নেওয়ার সময় আরো জানা যায় নওহাটার বেতকুরি গ্রামে জলিল নামের এক ব্যক্তির পুকুর খনন চলছে। আনুমানিক ৩০ কাটা জায়গার উপরে সেই পুকুরটি ক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন ওয়াসিম আর মোখলেস নামের ব্যক্তি ।

আইন যেখানে নিষেধ করে দিয়েছেন সেগুলোকে তোয়াক্কা না করে সেই বিষয়টি কিছু পাতি নেতা ব্যবসা খুলে বসেছে। তাদের নিজের জমি বা পুকুরের সাথে কোন সংযুক্ত নাই কিন্তু তারা টাকার বিনিময়ে দায়িত্ব নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে রাতের আঁধারে পুকুর খনন আর মাটি বিক্রি করে আসছে।

বেতকুরি গ্রামের মাবুদ সরকার জানাই,পবা এলাকায় পানের চাষ খুব ভালো হয় সেই পানের বরের জন্য পুকুরের মাঝখানের মাটিটি খুব কাজে দেয়। এই মাটি খাদক গুলি সেই পুকুরের মাটি পানের বরে না দিয়ে বিক্রি করছে ইট ভাটাই। পানের বরে সেই মাটি দিলে কৃষকের কাছে দাম কম পাবে সে জন্য বেশি টাকার আশায় বিক্রি করছে ইট ভাটায়।

বেশি টাকা নেওয়ার একটাই কারণ প্রশাসনকে ম্যানেজ করার জন্য তাদের যে খরচটি হয় সেটা হওয়ার পরেও যেন তাদের পকেট ভর্তি হয়। যারা পুকুর খনন করছে তারা মেইন কালপিট না আসল কালপিট উপজেলা প্রশাসন। যাদের পকেট গরম করে এরা গাড়ির পর গাড়ি মাটি ভর্তি করে ইটভাটার দিকে চলে যাচ্ছে পুলিশের সামনে দিয়ে।

পুকুর খননকারি রাজু জানান,আমি পুকুর করছি আরোও অনেকে করছে আমার পুকুরের কাজ বন্ধ করতে পারবেনা । আপনি ইউএনও থানা যাকে ইচ্ছা বলেন কাজ আমার চলবেই আমি ম্যানেজ করেই কাজ করছি আমার সাথে ইউএনও স্যারের সবসময় যোগাযোগ হচ্ছে।

আপনি যাকেই ফোন দেবেন তার ফোন আমার কাছে আসবে আমি গাড়ি তুলে নেওয়ার পর প্রশাসনের কোন ব্যক্তি পুকুর পাড়ে আসবে। বেতকুরীর পুকুর মালিক জালাল কে ফোন দিলে সে জানাই , পুকুর আমার কিন্তু দায়িত্ব অন্যজনকে দেওয়া আছে তাদেরকে পুকুর পাড়েই পাবেন তাদের সাথে কথা বলেন।

মাটি বিক্রয়ের বিষয়টি বললে তিনি বলেন, মাটি বিক্রির নিষিদ্ধ ঠিক আছে কিন্তু আমি এত মাটি কোথায় রাখব বেকার সেইগুলি রাখার চাইতে ভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছি সেখান থেকে ইট তৈরি হলে তবেই তো মানুষ বাড়ি করতে পারবে। জমিতে ফসল করলে লাভ তেমনটা হয় না একদিকে সারের দাম অনেক আরেক দিকে চাষ কৃত ফসল ন্যায্য মূল্য পাওয়া যায় না এই জন্যই মাছ চাষ করা।

এছাড়াও প্রতিবেদক পবা থানার ওসি (সোহরাওয়ার্দী) বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, একই এলাকায় গত কয়েকদিন আগে অভিযান করে একটি পুকুর খনন বন্ধ করে দিয়েছিলেন এসিল্যান্ড স্যার। যদিও আবারও পুকুর খনন চলমান রাখে তাহলে আপনারা এসিল্যান্ড স্যারকে অভিযোগ দেন। এখানে পুলিশের কিছুই করার নাই।

পবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) অভিজিৎ সরকার গত ২দিন আগেও আমরা অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষনিক অভিযান পরিচালনা করেছিলাম সেখানে কাউকে না পেয়ে ২টা গাড়ির ব্যাটারী জব্দ করেছিলাম।

আপনার মাধ্যমে আবারও অবগত হলাম যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহন করছি। কথা বললে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রতিবেদককে বলেন, আপনি তো আগের দিন বিষয়টি জানিয়েছিলেন সেটার নিউজ করেন নাই।

আপনার কাজটা আপনি করেন আমারটা আমি করছি। নির্বাচনের কাজে একটু ব্যস্ত আর এসি ল্যান্ড ছুটিতে আছে আমি সকালে থানায় বলে লোক পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিব।

তার কিছুক্ষণ পরে তিনি ফোন দিয়ে বলেন, আপনি এখন কোথায় যদি সময় থাকে তাহলে আমার অফিসে আসেন চা খাওয়ার দাওয়াত রইল। এর প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট পর ফোন দিয়ে তিনি জানাই, থানা থেকে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল তারা ৩টি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *