স্টাফ রিপোর্টারঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া গুচ্ছগ্রামের উপহারের ঘর গুলো পেয়ে অনেকেই পেয়েছেন মাথা গোজার ঠাঁই। এই ঘরগুলো পাওয়া উপকার ভোগীরা দুহাত তুলে দোয়াও করছেন প্রধানমন্ত্রী জন্য। গুচ্ছগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর পাওয়ার তালিকায় এখনো নাম উঠাতে পারেননি অনেক ভূমিহীন-দুস্থ ও বৃদ্ধ মানুষেরা। তাই এদের যেন দুঃখেরা সীমা নেই।
এমনই এক ঘর না পাওয়া ভূমিহীন-বৃদ্ধা এক চোখ নষ্ট প্রতিবন্ধীর দেখা মিলেছে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ভালুকগাছির, বেলনাতলা এলাকায়।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ওই বৃদ্ধা মহিলার নাম আপানী বেগম, বহু বছর আগেই দুনিয়া ত্যাগ করেছেন পিতা ঘেতু প্রামানিক। আপানী বেগম তিনি, মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করে খান, নিজের জায়গা জমি না থাকার যেখানে রাত সেখানে কাত, এই অবস্থাতেই কাটছে তার দিন।
এখন তেমন আর ভিক্ষা করতে পারেন না তিনি। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। কথা বলার অনেক চেষ্টা করেছি, দুঃখ কষ্ট আর বয়সের ভারে মুখ দিয়ে যেন কথা বের হচ্ছে না ওই বৃদ্ধার। তবে দু চোখ বেয়ে কান্নার নোনা জল বের হচ্ছে তা যে বুকফাটা আর্তনাদ সেটা খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছিল।
সাংবাদিকদের দেখে অনেক কিছুই বলার চেষ্টা করছিলো কিন্তু বয়সের ভারে তা আর হচ্ছিল না। তার চোখের পানি এটাই প্রমাণ করে যে তিনি খুব কষ্টে আছেন একটা ঘরের খুব বেশি দরকার।
পুঠিয়া উপজেলার বেলনাতলা নামক গুচ্ছগ্রামে একজনকে হাতে পায়ে ধরে, কান্নাকাটি করে উঠেছিলেন মজনু মিয়া নামক তার পাওয়া ঘরে। পরবর্তীতে সেই ঘরেও তার জায়গা হয়নি। বয়সের ভার আর একটি চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়া ভালোভাবে দেখতেও পান না তিনি। বর্তমানে তিনি সেই ঘরের বারান্দায় মানবতার জীবন যাপন করছেন।
স্থানীয় বহু মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আপানী বেগম ভূমিহীন আর অসুস্থ বৃদ্ধা। তার পিতার জায়গা জমি বলতে কিছুই নেই। কিশোর-কৈশোর, যৌবন পেরিয়ে বর্তমানে প্রায় ৭০ বছর বয়স। জীবন সঙ্গী হিসেবে বিয়েটাও করতে পারেন নি।
গরিব অসহায় কে করবে বিয়ে এমনটাও অনেকে বলছিলেন। কেউ কেউ বলছেন জীবনের এই শেষ মুহূর্তে এই বৃদ্ধার থাকার জন্য একটা ঘরের খুবি দরকার যদি আপনারা পারেন তাহলে তাকে সহায়তা করুন। আবার কেউ কেউ বলছেন, তিনি ভিক্ষা করে খায়। যেদিন ভিক্ষা করতে পারেন না সেদিন না খেয়েও থাকতে হয়। অথবা প্রতিবেশীর উপর ভরসা করে থাকতে হয় খাবারের জন্য। তাই খুব দ্রুত সরকারের এই ধরনের মানুষদের উপর নজর দেওয়া দরকার।
নাদের প্রামানিক নামের এক ব্যক্তি তিনি বলেন, মূলত বেলনাতলা গুচ্ছগ্রামে বেশ কয়েকটি ঘর আছে। সেখানে মজনু মিয়া নামের এক ব্যক্তি একটি ঘর পেয়েছিল। বৃদ্ধা আপানীর দুঃখ কষ্ট দেখে মজনু মিয়া মৌখিকভাবে তার ঘরটি ওই বৃদ্ধাকে থাকার জন্য ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে সরকারি লোকজন গিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বারান্দায় আপাতত থাকার কথা বলে আসেন।
এদিকে এ বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় ৪ নং ভালুকগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জিল্লুর রহমানের সাথে তিনি বলেন, আপানী বেগম তার কোন থাকার জায়গা জমিনে একদম ভূমিহীন ব্যক্তি। মজনু মিয়া নামের যে ব্যক্তি ঘর পেয়েছিল, ওই ব্যক্তি বৃদ্ধা আপানী বেগমকে থাকার অনুমতি দিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে ওই বৃদ্ধা মহিলাটিকে একটি থাকার জায়গা ঘর দিতে পারলে খুবই ভালো হয়। আমি জানিনা কেনো তাকে ওই ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম নুর হোসেন নির্ঝর তিনি বলেন, এখানে ২ শতাংশ জমি সহ দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে। আমরা ইচ্ছে করলে একজনের ঘর আরেকজনকে দিতে পারি না। যারা ঘর পেয়েছেন অথচ এদের মধ্যে যাদের ঘরের দরকার নেই, তাদের ঘরগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত উপকার ভোগীদের মাঝে দেওয়া হবে।